শিশুশ্রম বন্ধ করে শিশুদের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে: আইন কমিশনের চেয়ারম্যান
রতন বালো: সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি)-এর আলোকে চলতি বছরের মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে অঙ্গীকারবদ্ধ সরকার। সরকারের এই প্রতিশ্রুতি ও ঘোষিত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও তার সফল বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
দেশে নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় আইন কমিশনের জন্য এটি যুগান্তকারী পদেক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা বলেছেন, গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষায় দ্রুত সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করতে হবে। ২০০১ সালের ১২ মার্চ ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম সম্পর্কিত আইএলও কনভেনশন নং-১৮২ অনুস্বাক্ষর করেছে।
এর মধ্য দিয়ে সরকার জরুরি ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম প্রতিরোধ ও নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। ২০২২ সালের ২২ মার্চ শিশুদের কাজে প্রবেশের ন্যূনতম বয়স বিষয়ক আইলএলও কনভেনশন নং-১৩৮ অনুস্বাক্ষর করেছে। এই কনভেনশন এর ৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ১৪ বছর বয়সের আগে কোন শিশু কাজে প্রবেশ করতে পারবে না।
তবে, ১৩-১৫ বছর বয়সী শিশুদেরকে হালকা কাজে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে যা কোনো ভাবেই তাদের স্বাস্থ্য ও শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ও বাধা সৃষ্টি করবে না এবং কোনো ভাবেই তাদের সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে না বলে শিশু বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সংলাপে এ সব তথ্য তুলে ধরা হয়। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) অর্জনে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।
তারা বলেছেন, বিদ্যমান আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং নীতিমালাসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় গৃহকর্মী শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই নতুন আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা জরুরি। উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি), শাপলা নীড় ও এডুকো-বাংলাদেশ আয়োজিত সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি জিনাত আরা।
এএসডির নির্বাহী পরিচালক এম এ করিমের সভাপতিত্বে সংলাপে বক্তৃতা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সারাওয়াত মেহজাবীন, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সালমা আলী, আইএলও বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার সৈয়দা মুনিরা সুলতানা, শাপলা নীড়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর তমকো উচিয়ামা, এডুকোর কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুল হামিদ, ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রোটেকশন স্পেশালিস্ট শাবনাজ জাহরীন, এডুকোর ম্যানেজার মো. শহিদুল ইসলাম, আইএলও’র ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সৈয়দা মনিরা সুলতানা, শিশু অধিকার ফোরামের ভাইস-চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান কামাল, ইনসিডিনের প্রকল্প ব্যব¯’াপক অ্যাডভোকেট রফিকুল আলম, এএসডি’র প্রকল্প পরিচালক ইউকেএম ফারহানা সুলতানা প্রমুখ।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ শরফুদ্দিন খান। তিনি বলেন, এসডিজির আলোকে ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। অথচ গৃহকর্মী শিশুদের প্রতিনিয়ত মারধরসহ নানা নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে। তাই দেশের নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় সরকারের ওই প্রতিশ্রুতি ও ঘোষিত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং তার সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান জিনাত আরা বলেন, শিশুশ্রম বিশ্বের কোথাও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই শিশুশ্রম বন্ধ করে শিশুদের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আমরা সভ্য সমাজের বাসিন্দা কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিবে।
তিনি আরো বলেন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে গৃহকর্মে নিয়োজিত অনেক শিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আবার কারো আশ্রয় হয়েছে যৌন পল্লীতে। এমনকি অনেকে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তাই সরকার এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে ২০২৫ সালের মধ্যে সকল ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে কাজ করছে। শুধু ঝুঁকিপূর্ণ নয়, সকল প্রকার শিশুশ্রম বন্ধে সকলকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার ও উন্নয়ন সং¯’াগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর গুরুত্বারোপ করেন এম এ করিম। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) আলোকে সরকার ২০২৫ সনের মধ্যে সব ধরনের শিশু শ্রম নিরসনে অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকারের এই প্রতিশ্রুতি ও ঘোষিত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু গৃহকর্মীর অধিকার ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও তার সফল বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
বিআলো/তুরাগ