নতুন উচ্চতায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ: ৩১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম
অর্থনীতি ডেস্ক: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির ধারাবাহিক অবনতির পর বাংলাদেশ এখন নতুন এক মাইলফলকে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১.৩১ বিলিয়ন ডলার (তিন হাজার ১৩১ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার)।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) হিসাব অনুযায়ী, এই রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬.৩২ বিলিয়ন ডলার (দুই হাজার ৬৩২ কোটি ৫৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার)।
বাংলাদেশ ব্যাংক এবার প্রথমবারের মতো নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (NIR) বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ-এর তথ্য প্রকাশ করেছে, যা ২০.৩১ বিলিয়ন ডলার। এই রিজার্ভ দিয়ে দেশের প্রায় পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক ধারা বজায় থাকায় এই মাইলফলক অর্জিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুধু জুন মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশ পেয়েছে: IMF থেকে ঋণের দুটি কিস্তি মিলিয়ে ১.৩৫ বিলিয়ন ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) থেকে ০.৯ বিলিয়ন ডলার, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (JICA) থেকে ০.৩৫ বিলিয়ন ডলার এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) থেকে ০.৪ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া মানি লন্ডারিং ও অর্থ পাচার রোধে সরকারের চলমান কঠোর পদক্ষেপ এই রিজার্ভ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন খান জানান, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বেড়েছে। আমদানিতে কড়াকড়ি থাকায় ওভার ইনভয়েস করে টাকা পাচার সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ডলার সহায়তা দেয়নি, সবাইকে নিজেদের আমদানি নিজেরাই সামলাতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ উন্নয়ন সহযোগীদের শর্ত মানার ফলে ঋণ ছাড় দ্রুত সম্ভব হয়েছে। এই সব কিছুর সম্মিলিত ফল হচ্ছে বর্তমান রিজার্ভের অবস্থান।
২০২৩ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে প্রবাসীরা বৈধ পথে অর্থ পাঠানো অনেক বেশি হারে শুরু করেন। এতে ডলারের বাজারে চাপ কমে আসে এবং রিজার্ভ বাড়তে শুরু করে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ১০ মাস ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে। এর পাশাপাশি বাজেট সহায়তা, ব্যাংক খাত সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা হিসেবে প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ দেশে এসেছে, যা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।
করোনা মহামারির সময় ২০২১ সালে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। কিন্তু এরপর বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানির দাম বাড়া ও আমদানির চাপে রিজার্ভ দ্রুত কমে আসে।
রিজার্ভ ধরে রাখতে বাংলাদেশ ২০২২ সালের জুলাইয়ে IMF-এর কাছে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চায়। এর প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ঋণ প্যাকেজ অনুমোদন করে IMF, যার মধ্যে ছিল: ৩৩০ কোটি ডলার ECF ও EFF সহায়তা, ১৪০ কোটি ডলার RSF সহায়তা।
পূর্বে রিজার্ভের ঘাটতি ও ঋণপত্র খোলার জটিলতা দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করেছিল। তবে বর্তমান উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা সেই সংকট কাটিয়ে উঠেছে। বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বিআলো/সবুজ