আবু সাঈদ হত্যা: ২৬ আসামির বিরুদ্ধে পরোয়ানা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশ, ১০ জুলাই পরবর্তী শুনানি
নিজস্ব প্রতিবেদক: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে মামলার ২৬ পলাতক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
এছাড়া, ইতোমধ্যে গ্রেফতার চার আসামিকে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের পরবর্তী শুনানির দিন আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১০ জুলাই।
সোমবার (৩০ জুন) বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন—অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তাকে সহযোগিতা করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, মিজানুল ইসলাম ও আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।
প্রসিকিউশনের দাবি, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, এই ঘটনায় সাবেক এসআই আমির হোসেন এবং কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর শরিফুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী আকাশসহ আরও অনেকেই হত্যাকাণ্ডে সহায়তা ও উসকানির ভূমিকা রেখেছেন।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। মামলার ৩০ আসামির মধ্যে ২৬ জন পলাতক, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদ।”
তাজুল ইসলাম আরও জানান, গ্রেফতার চার আসামি হলেন—বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক এএসআই আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় এবং ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।
এর আগে সকালে এই মামলায় ১০৯ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়। শুনানিতে ১৯৭১ সালের সাধারণ নির্বাচন থেকে শুরু করে বিগত সরকারগুলোর শাসনকাল পর্যন্ত নানা প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন প্রসিকিউশন। তদন্ত সংস্থা গত ২৪ জুন এই মামলার প্রতিবেদন জমা দেয়, যাতে ৩০ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
আবু সাঈদ ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের ছাত্র এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদের মৃত্যুর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এর ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।
বিআলো/সবুজ