ছয় মাসেই ভেঙে পড়ল ভাসমান সেতু: ১৮ লাখ টাকার প্রকল্প প্রশ্নের মুখে
মুশফিকুর রহমান, কয়রা, খুলনা: খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সরকারপুকুর এলাকায় প্রায় ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি ভাসমান সেতু ছয় মাসের মাথায়ই ভেঙে পড়েছে। এতে চলাচলের সময় পড়ে গিয়ে একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। ভেঙে পড়া সেতুটি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী।
সরকারপুকুর বা ‘মিষ্টি পুকুর’ নামে পরিচিত এলাকাটি আশপাশের কয়েকটি গ্রামের জন্য বিশুদ্ধ পানির অন্যতম উৎস। ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলার পর পুকুরে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেলে এলাকাবাসী দীর্ঘ এক যুগ ধরে কাদা মাড়িয়ে কিংবা সাঁতার কেটে পানি সংগ্রহ করে আসছিল।
অবশেষে ২০২১-২২ অর্থবছরে লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (LoGIC) প্রকল্পের আওতায় ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩৭১ টাকা ব্যয়ে একটি ভাসমান সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যার নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের জুন মাসে। সেতুটি নির্মাণের পর এলাকায় স্বস্তি ফিরলেও, তা ছিল অল্প সময়ের জন্যই।
স্থানীয়রা জানান, সেতুটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী। কাঠামো ছিল দুর্বল ও অস্থায়ী। কয়েক মাসের ব্যবধানে সেতুর টিনের পাত উঠে যেতে থাকে এবং হাতলের অংশ ভেঙে পড়ে। এতে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
মহেশ্বরীপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আবু মুসা শিকারী বলেন, সেতুর টিনগুলো ছিল এতটাই পাতলা যে কয়েক মাসেই উঠে যেতে শুরু করে। হাতল ধরলে মনে হতো এখনই খুলে যাবে।
স্থানীয় আরিফ মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা স্থায়ী রাস্তার দাবি জানিয়েছিলাম, কিন্তু তারা দিলো ভাসমান সেতু। তাও আবার ছয় মাসেই ভেঙে পড়ল। এটা যেন এলাকার মানুষের সঙ্গে উপহাস।”
অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে স্থানীয়দের মতামত যথাযথভাবে নেওয়া হয়নি। এলাকাবাসীর দাবি, ওই টাকায় পুকুর পর্যন্ত বালু ফেলে একটি টেকসই রাস্তা নির্মাণ করা যেত, যা বহু বছর ব্যবহারযোগ্য হতো।
বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরো কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, যদি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু ছয় মাসেই অকার্যকর হয়ে পড়ে, তাহলে নিঃসন্দেহে তা জনস্বার্থে একটি বড় অপচয়। কাজের আগে সঠিক পরিকল্পনা ও জনগণের অংশগ্রহণ থাকা উচিত ছিল। এছাড়া প্রকল্পের বাজেট ও অগ্রগতি জনসম্মুখে প্রকাশ হওয়া দরকার।
LoGIC প্রকল্পের ফ্যাসিলিটেটর মো. আহসান উল্লাহ বলেন, আমরাও শুনেছি সেতুটি নষ্ট হয়ে গেছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। প্রকল্পের পুরো অর্থ শুধুমাত্র সেতুর জন্য নয়, বরং তা কমিউনিটির অন্যান্য খাতেও ব্যবহৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি জনসেবামূলক হলেও বাস্তবায়নের পর কাঙ্ক্ষিত সুফল মেলেনি- সেটি দুর্ভাগ্যজনক।
সেতুটি ভেঙে পড়ার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা দাবি জানিয়েছেন, প্রকল্পটির কার্যকারিতা নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত এবং ভবিষ্যতে যেন টেকসই ও জনবান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়, সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে।
বিআলো/এফএইচএস