• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    নিরাপত্তার ঝুঁকিতে ট্রেন যাত্রা; নারী যাত্রীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক 

     dailybangla 
    03rd Jul 2025 11:52 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    রতন বালো: সারাবিশ্বে ট্রেন যাত্রাকে নিরাপদ যাত্রা হিসেবে স্বীকৃত হলেও বাংলাদেশে তার ব্যতিক্রম। কারণে- অকারণে ট্রেনের বিলম্ব যাত্রীদের জন্য গলার কাটা হলেও কর্তৃপক্ষ অবিচল। আবার বিলম্বের যুক্তিসঙ্গত কারণও রেল কর্তৃপক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয় না।

    এদিকে রেলে যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়ের সঙ্গে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে নারীযাত্রীকে ধর্ষণ। বিগত ৬ বছরে রেলে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১০টি। ফলে নারী যাত্রীদের কাছে ট্রেন জার্নি মানেই মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। এদিকে ট্রেনে যাত্রী কমলেও সরকারি সংস্থায় হিসেবে ট্রেন কর্মীদের নেই কোন জবাবদিহিতা, নেই বেতন-ভাতার সঙ্কট।

    ভ্রমনের ক্ষেত্রে ট্রেন একটি গুরুত্বপূর্ণ গণপরিবহন। অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের মানুষসহ বিশাল জনগোষ্ঠী এর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে এতে ভ্রমণকালে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। নিয়মিত যাত্রীদের অভিযোগ, চলন্ত ট্রেনে প্রায়ই ঘটছে চুরি, ছিনতাই। কখনো কখনো ঘটছে ধর্ষণ এবং ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার মতো গুরুতর অপরাধও।

    এতে যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। প্রশ্ন উঠেছে ট্রেনে যাত্রীর নিরাপত্তায় কর্তৃপক্ষের গৃহীত ব্যবস্থা নিয়ে। গত কয়েক বছরে ট্রেনে ধর্ষণের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ২৫ জুন সকালে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় রংপুর এক্সপ্রেসের টয়লেটে এক নারী যাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে রেলওয়ের অস্থায়ী কর্মচারী সাইফুল ইসলামকে (২৮) আটক করা হয়।

    এদিকে ট্রেনে ধর্ষণের এ পর্যন্ত সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে ২০২৪ সালের ২৬ জুন। এদিন চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসে এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হন। অভিযুক্তরা রেলের খাবার সরবরাহকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন।

    রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ থেকে ২০২৫ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত ট্রেনে ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে অন্তত ১০টি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ছিলেন রেলকর্মী বা রেলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। এসব ঘটনায় মামলা হলেও বিচারপ্রক্রিয়ার গতি ধীর। অনেক ক্ষেত্রে বিচারের মুখ দেখেননি ভুক্তভোগীরা।
    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটে ট্রেনের টয়লেটে। এরপর খাবার বগিতে। অনেক নারীই সম্মানহানির ভয়ে যৌন হয়রানির বিষয়টি চেপে রাখার চেষ্টা করেন। তবে কেউ কেউ আবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। সে ঘটনাগুলোই মূলত সামনে আসছে।

    রেলের অস্থায়ী কর্মচারীরা এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটাচ্ছেন বলে তাঁদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁদের হাতে যাত্রীরা নিরাপদ কি না, এ প্রশ্ন তুলেছে যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ও ব্যক্তিরা। এইসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা থেকে নারী যাত্রীদের কাছে রেলভ্রমন মানেই আতঙ্কের ভ্রমন।

    গণপরিবহনের যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এবিষয়ে বলেন, রেলে জিআরপি এবং আরএনবির মতো দুটি বাহিনী কাজ করছে। কিন্তু যাত্রীরা তারপরও নিরাপদ নয়। ট্রেনে শুধু মালপত্র চুরি নয়, ধর্ষণ ও ডাকাতির মতো বড় অপরাধের ঘটনা ঘটছে। ডাকাতির সময় যাত্রীকে শ্বাস রোধ করে মেরে বাইরে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে যাত্রীরা ট্রেনে অনিরাপদ। যাঁরা যাত্রী ও রেললাইনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। মামলা ও শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধ কমবে।

    চুরি, ছিনতাই নিয়মিত ঘটনা:
    চলন্ত ট্রেনে যাত্রীদের মালামাল চুরি, মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগ নিয়মিত পাওয়া যায়। একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, অনেক সময় অপরিচিত লোক ট্রেনের কামরায় ঢুকে টিকিটধারী বৈধ যাত্রীর আসনকে নিজের দাবি করে হুমকি-ধমকি দেয়। একপর্যায়ে ব্যাগ বা মোবাইল কেড়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। ছুরি ঠেকিয়েও লুট করা হয়। যাত্রীদের ট্রেনের দরজা দিয়ে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।

    বৃহস্পতিবার রাজধানী তথা দেশের প্রধান রেলস্টেশন কমলাপুরে ঘুরে শিথিল নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখা যায়। টিকিট ছাড়া যাত্রীরা অনায়াসে স্টেশনে প্রবেশ করছিল। টিকিটহীন বা উটকো লোকের প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ ঠেকানোর কোনো তৎপরতা নেই। এ ছাড়া ট্রেনে নির্বিঘ্নে উঠছিল হকার।

    কয়েকজন যাত্রী বললেন, হকারসহ অনাকাঙ্ক্ষিত এসব লোকজনের উপস্থিতি শুধু বিরক্তিকর না, তা নিরাপত্তার দিক থেকেও অগ্রহণযোগ্য।

    সুমি হালদার নামের রেলের এক নিয়মিত যাত্রী এ সময় বলেন, ট্রেনযাত্রা এখন অনেকটা আতঙ্কের বিষয়েই পরিণত হয়েছে। এসি চেয়ারেও অযাচিত লোক ঘোরাফেরা করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকদের দেখা যায় না বললেই চলে। যা দু-একজন থাকে, তাদের বিনা টিকিটের যাত্রীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখি।

    বন্ধ হচ্ছে না পাথর ছোড়াও:
    রেলযাত্রার আরেক পুরোনো সমস্যা লাইনের পাশ থেকে লোকজনের চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারা। এ ঘটনায় বহু যাত্রী আহত হয়েছে চোখে-মুখে পাথর বা জানালার ভাঙা কাচ লেগে। ঘটনার পরপর বা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনাও আছে। ট্রেনে দায়িত্বরত গার্ড, চালক, পুলিশসহ অন্য কর্মীদেরও আহত হওয়ার নজির আছে। ২০১৩ সালে চলন্ত ট্রেনে ছোড়া ঢিলে প্রীতি দাস নামের একজন প্রকৌশলীর মৃত্যু হয়।
    প্রাপ্ত তথ্যমতে, শুধু ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ৫০টির বেশি। রেল কর্তৃপক্ষের প্রচারণা, আবেদন-নিবেদন, অপরাধী ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কারের ঘোষণা ইত্যাদির পরও এ বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর ছোড়ার শাস্তি সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা। পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে ৩০২ ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধানও রয়েছে। তবে পাথর ছোড়ার জন্য এ আইনে কারও শাস্তির কোনো নজির নেই বলেই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

    নিরাপত্তার অপ্রতুল ব্যবস্থা:
    সারাদেশে বর্তমানে মোট ৩৮৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলে। এর মধ্যে ১০৬টি আন্তনগর ট্রেন, ১৮০টি মেইল ও কমিউটার ট্রেন এবং ১০২টি লোকাল ট্রেন। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এসব ট্রেনে যাতায়াত করে। আন্তনগর ট্রেনে রেল পুলিশের তিনজন সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের কাজ যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও মালামালের দেখভাল করা। শত শত যাত্রীবাহী অনেকগুলো কামরার পুরো একটি ট্রেনে ৩ জন পুলিশ সদস্য কতটা নিরাপত্তা দিতে পারেন, এ নিয়ে যাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছে। তার ওপর একই পথে চলাচল করা মেইল, কমিউটার ও লোকাল ট্রেনগুলোয় এ ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থাও নেই। ফলে মূলত এসব ট্রেনেই অপরাধ ঘটছে। কিছু ট্রেনে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে, যার অনেকগুলোই নষ্ট বা অকার্যকর। ৪৬৬টি রেলস্টেশনের মধ্যে সিসিটিভি আছে মাত্র ৩৭ শতাংশ স্টেশনে।

    কর্মকর্তারা যা বললেন:
    ট্রেন যাত্রীদের নিরাপত্তা বিষয়ে কথা হয়েছে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বি এম হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, সারা দেশে অনেকগুলো ট্রেন চলাচল করে। সব ট্রেনে ৩-৪ জন পুলিশ সদস্য দেওয়া সম্ভব হয় না। কারণ, আমাদের লোকবলের সংকট আছে। আর একটি ট্রেনে মাত্র ৩ জন পুলিশ দিয়েও নিরাপত্তা দেওয়া যায় না। ফলে যাত্রীদের নিরাপত্তায় কিছুটা তো ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। তবে সীমাবদ্ধতা থাকলেও যাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

    এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন নিরাপত্তার বিষয়টি রেল পুলিশের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রেল পুলিশের (জিআরপি)। আমাদের সুপারিশ ছিল, প্রতিটি ট্রেনে অন্তত পাঁচজন পুলিশ সদস্য রাখার, যদিও তা-ও সে অর্থে পর্যাপ্ত নয়। যাত্রী নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে আমরা জিআরপিকে বলব। রেলের নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) মূলত রেলওয়ের স্থাপনাসমূহ ও সম্পদ রক্ষায় কাজ করে। ট্রেনের ভেতরে যাত্রী নিরাপত্তা ও অপরাধ দমনের দায়িত্ব জিআরপির ওপরই বর্তায়। তবে রেলের জনবলসংকট রয়েছে। তাই কিছু জায়গায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অস্থায়ী জনবল দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। যদিও যাত্রীদের এমন অনীহার কারণ অনুসন্ধানে রেলওয়োর তেমন কোন পদক্ষেপের তৎপরতা চোখে পড়েনি।

    বিআলো/তুরাগ

    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    September 2025
    M T W T F S S
    1234567
    891011121314
    15161718192021
    22232425262728
    2930