প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মেয়েকে দিয়ে ক্লাস নেওয়া ও অভিভাবককে থাপ্পর মারার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক: পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিজের মেয়েকে দিয়ে ক্লাস নেওয়া এবং এক অভিভাবকের গালে থাপ্পর মারার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ওই অভিভাবককে স্কুল ভবনের তিন তলা থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
গলাচিপা উপজেলার ১ নম্বর আমখোলা ইউনিয়নের মুদিরহাট সংলগ্ন ৯২ নম্বর কালাই কিশোর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজা লিপি নিয়মিতই তার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে রাফাকে দিয়ে ক্লাস করান বলে অভিযোগ। সম্প্রতি ঘটনার দিন রাফা ৪র্থ শ্রেণির ক্লাস নেন। ওই ক্লাসে ফাইমা নামের এক শিক্ষার্থী পড়া না পারায় তাকে স্কেল দিয়ে মারধর এবং কান ধরে ওঠবস করানো হয়। ফাইমা বাড়ি গিয়ে বিষয়টি তার বাবাকে জানালে তিনি স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চান। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক মাহফুজা লিপি ফাইমার বাবা বসির প্যাদার গালে থাপ্পর মারেন এবং তাকে স্কুলের তিন তলা থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন।
অভিভাবক বসির প্যাদা বলেন, “আমার মেয়ে অসুস্থ অবস্থায় ক্লাসে গিয়েছিল, সেদিন হেডমাস্টারের মেয়ে তাকে মারধর করে। আমি বিষয়টা জানতে চাইলে উনি গালাগালি করেন, গালে থাপ্পর মারেন এবং তিন তলা থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন।”
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, “বড় আপার মেয়ে রাফা আপা সেদিন আমাদের ক্লাস নেন। ফাইমা পড়া পারছিল না বলে ওকে কান ধরে ওঠবস করায় আর মারে। পরে ফাইমার বাবা আসলে বড় আপার সাথে ঝগড়া হয়, তখন বড় আপা ফাইমার বাবার গালে থাপ্পর মারে।”
স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক তালিকায় ছয়জন থাকার কথা থাকলেও উপস্থিত ছিলেন মাত্র দুইজন। প্রধান শিক্ষক মাহফুজা লিপিকে পাওয়া যায়নি। পরে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “তারা যদি কিছু বলে থাকে তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আসলে অভিভাবকের সাথে একটু মনোমালিন্য হয়েছে। এটা হয়নি, সেটা বলবো না। পরে আমরা মিলে গেছি। এটা বলার পরে বলেছি মনে কিছু রাখবেন না।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিষয়টি এলাকায় বিএনপি করে ফারুক হোসেন তাকে বলেছি।”
গলাচিপা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম সগীর বলেন, “কোনো কারণে অভিভাবকের গায়ে হাত দেওয়া বা অসৌজন্যমূলক আচরণ করা যাবে না। এরকম কিছু হয়ে থাকলে বিষয়টি ভালোভাবে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
প্রধান শিক্ষক মাহফুজা লিপি ২০০৭ সালের ২২ আগস্ট সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিয়ে একই স্কুলে টানা ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত আছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, নিজের বাবার বাড়ির এলাকায় থাকার সুবাদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়মিত স্কুলে না আসা, মেয়েকে দিয়ে ক্লাস নেওয়া এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা তার নিয়মে দাঁড়িয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসীর অভিযোগ, “মাহফুজা ম্যাডাম ক্ষমতার জোরে এখানে একরকম রাজত্ব চালান। স্কুলে ঠিকমতো আসেন না, মেয়েকে ক্লাসে বসান, আর শিশুদের এবং অভিভাবকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন।”
বিআলো/তুরাগ