গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের বার্ষিকীতে নাইরোবিতে পুলিশের কঠোর অবস্থান, জনশূন্য হয়ে পড়ে শহর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ১৯৯০ সালের গণতন্ত্রপন্থী “সাবা সাবা” আন্দোলনের বার্ষিকীতে সোমবার কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া অবস্থানের কারণে শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলো প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। সহিংসতার আশঙ্কায় বহু বাসিন্দা ঘরে অবস্থান করে।
“সাবা সাবা” অর্থাৎ “সাত সাত” দিবসটি ১৯৯০ সালের ৭ জুলাইয়ের সেই গণআন্দোলনের স্মরণে পালিত হয়, যা একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়ে কেনিয়াকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফিরিয়ে আনে।
এ বছর দিবসটিকে কেন্দ্র করে পুলিশ শহরজুড়ে একাধিক সড়ক অবরোধ করে এবং কেন্দ্রীয় নাইরোবিতে প্রবেশ সীমিত করে তোলে-যেখানে অতীতে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেশিরভাগ দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তত ২০টি পুলিশ চৌকির অবস্থান সংবলিত একটি অনলাইন মানচিত্র ছড়িয়ে পড়ে।
তবুও শহরের উপকণ্ঠে কয়েকটি স্থানে প্রধানত তরুণদের নেতৃত্বে ছোট ছোট বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে।

পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। বিক্ষোভকারীরা পাথর ছোড়ার পাশাপাশি কিছু এলাকায় লুটপাট ও ভাঙচুরেরও আশ্রয় নেয়।
এএফপি সাংবাদিকদের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত দুইজন আহত হন এবং আশপাশে কিছু সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়।
একটি প্রধান মহাসড়কে বিক্ষোভকারীরা “রুটো পদত্যাগ করো” এবং এক মেয়াদই যথেষ্ট”-এই স্লোগান দেয়, যা প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ।
এই বিক্ষোভ কেনিয়ার তরুণদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের প্রতিফলন-যারা অর্থনৈতিক সংকট, দুর্নীতি ও পুলিশের সহিংসতার শিকার বলে অভিযোগ করছে।
গত মাসে হওয়া বিক্ষোভগুলো সহিংসতায় রূপ নেয়, যাতে বহু মানুষ নিহত ও হাজারো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে অস্ত্রধারী লুটেরা ব্যবহার করে তাদের আন্দোলনকে কলঙ্কিত করছে। অন্যদিকে সরকার এই সহিংসতাকে “একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা” বলে আখ্যায়িত করেছে।
পুলিশের কঠোর প্রতিক্রিয়া অনেককেই রাস্তায় নামতে নিরুৎসাহিত করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, গত বছরের জুন থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছেন, এবং বহু মানুষ বিচার ছাড়াই আটক রয়েছেন।
আমি কখনও শহরকেন্দ্রকে এমন ফাঁকা দেখিনি,” বলেন ২৯ বছর বয়সী নিরাপত্তাকর্মী এডমন্ড খাইয়িম্বা।
৩২ বছর বয়সী মোটরসাইকেল চালক রজার্স ওনসোমু বলেন, আশা করি পরে আরও মানুষ পথে নামবে। তিনি প্রেসিডেন্ট রুটোর স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করেন।
বিক্ষোভ-পূর্ববর্তী রাতে, লাঠিসোটা হাতে সজ্জিত একদল ব্যক্তি কেনিয়ান মানবাধিকার কমিশনের প্রাঙ্গণে হামলা চালায়। সেখানে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে একটি সংবাদ সম্মেলন চলছিল।
২০২২ সালের নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট রুটো বিরোধীদলীয় নেতা রাইলা ওডিঙ্গার সঙ্গে একটি অস্থির জোট গড়ে তুলেছেন, যার ফলে ২০২৭ সালের নির্বাচনে কার্যত কোনও শক্তিশালী বিরোধী প্রার্থী দৃশ্যমান নয়।
তবে প্রতিবার বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে-যা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করছে।
প্রতিবার বিক্ষোভ হয়, সরকার আরও মানুষ হত্যা করে। এতে আন্দোলন থেমে যাওয়ার বদলে আরও বিস্তার লাভ করে, বলেন কর্মী নেরিমা ওয়াকো।
আফ্রিকান রাজনীতি বিশ্লেষক গ্যাব্রিয়েল লিঞ্চ (ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়) বলেন, সরকার ৯০-এর দশকের পুরনো দমননীতিই যেন আবার ব্যবহার করছে। কিন্তু এখন সময়টা আলাদা। তারা যেন বুঝতেই পারছে না যে, এখনকার বিশ্ব অনেক বদলে গেছে।
সূত্র-এএফপি
বিআলো/এফএইচএস