কৃষক দলের সভাপতির জমি দখল করল স্বৈরাচারের দোসর সোহেল রানা
* গোলাম দস্তগীর গাজীর দোসর অন্যের জমি জবর দখল করে কোটিপতি
*সোহেলের ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য মাসুদ, আকবর ও কাশেম
* সেনা সদস্য (অব.) পরিচয় দেয় সেনা কর্মকর্তা
* সোহেলের বিরুদ্ধে একাধিক ভুক্তভোগীর থানায় অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক: রূপগঞ্জ থানা কৃষকদলের সভাপতি শাহা আলম বেপারীর জায়গা জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে ভূমিদস্যু এবং স্বৈরাচারের দোসর সোহেল রানা। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার ইউসুফগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সিরাজ ভূঁইয়ার ছেলে সোহেল রানা একসময়ে সেনা সদস্য হিসেবে সেনাবাহিনীতে চাকরি করত। বর্তমান সে অবসরে। কিন্তু এলাকায় নিজেকে পরিচয় দেয় সেনা কর্মকর্তা হিসেবে।
এই পরিচয় দিয়েই ঘটিয়ে যাচ্ছে নানা অপকর্ম, ভূমিদস্যুতা এবং অন্যের জমি জবর দখল। এছাড়া এলাকায় স্বৈরাচারের দোসর হিসেবেও তার বড় ভাই মাসুদ মেম্বার পরিচিত। হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন গোলাম দস্তগীর গাজীর নাম ব্যবহার করে নানা অপকর্ম ও ভূমিদস্যুতা ছিল মাসুদের রুটিন ওয়ার্ক।
গত ৫ আগস্টে মাসুদ সিন্ডিকেট সরাসরি ছাত্রহত্যা ও আন্দোলনকে প্রতিহত করতে তার ভূমিকা ছিল অন্যতম। পট পরিবর্তনের পরও তার ক্ষমতার দাপট কমেনি। কারণ আওয়ামীপন্থি বিএনপিদের ছত্রছায়ায় আছেন নীলা-গাজীর অন্যতম মাসুদ মেম্বার সিন্ডিকেট। তাই এখনো দোর্দণ্ডপ্রতাপে তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
আরো জানা গেছে, সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর পরই সে এলাকায় আবির্ভূত হয়েছে ভূমিদস্যু এবং অন্যের জমি জবরদখলকারী হিসেবে। উল্লেখ্য, চাকরিরত অবস্থায় তার পদবী সেনা সদস্য থাকলেও এলাকায় সে নিজেকে পরিচয় দেয় সেনা কর্মকর্তা হিসেবে। আর এ পরিচয়েই সে সেনা ক্যাম্পে সাধারণ মানুষের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করেছেন । এই ভয়ে সাধারণ মানুষ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানায়, সিরাজ ভূঁইয়ার ছেলে মাসুদ মেম্বার ও সোহেল রানা স্বৈরাচারের দোসর। ওই আমলে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে তাদের সিন্ডিকেট নিরীহ মানুষের জায়গাজমি দখল করেছে। এই সোহেল রানার রয়েছে ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট। তারা এলাকা ঘুরে ঘুরে খোঁজখবর রাখে কার জমির কি অবস্থা।
আর সুযোগ বুঝেই সেসব জমিতে ভাগ বসায় এই ভূমিদস্যুরা। প্রথমে জমির মালিকদের সেনা কর্মকর্তা এবং সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর লোক এই পরিচয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে ভীতির সঞ্চার করে এবং একপর্যায়ে তার সিন্ডিকেট বাহিনী নিয়ে ওইসব জমি জবর দখল করে। তার সিন্ডিকেট সদস্যের মধ্যে মাসুদ (সোহেলের আপন ভাই), আকবর এবং কাশেম অন্যতম।
এসব জবর দখলের জন্য সোহেল রানার নামে থানায় একাধিক অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ জুন রূপগঞ্জের পশি গ্রামের বৃদ্ধা রাশিদা বেগমের ২ শতাংশ জায়গা জবর দখলের চেষ্টা করে।
রাশিদা বেগম ক্রয়কৃত ওই জমি তার নিজ নামে নামজারিসহ জরিপ ও সরকারি খাজনাদী পরিশোধ করে ভোগ দখল করে আসছে। সোহেল রানা বৃদ্ধা রাশিদার ওই পাকা প্রাচীর ঘেরা জমিতে জোরপূর্বক ১০/১২ জনের সন্ত্রাসি বাহিনী নিয়ে জবর দখল করে। শুধু তাই নয়, ওই জমির পাকা প্রাচীর থাকা সত্ত্বে¡ও সোহেলের নেতৃত্বে আরেকটি পাকা প্রাচীর নির্মাণ করে।
এতে বৃদ্ধার ছেলে মো. শাহা আলম বেপারী (রূপগঞ্জ থানা কৃষকদলের সভাপতি) তাদের বাধা প্রদান করলে ওই ১০/১২ জনের সন্ত্রাসী দল তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এরপর তারা পাকা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলমান রাখে। একপর্যায়ে সোহেল রানা এবং তার সিন্ডিকেট ও সন্ত্রাসী বাহিনী রূপগঞ্জ থানা কৃষকদলের সভাপতি শাহা আলম বেপারীকে বলে তোর পরিবারের সদস্য এবং তোদের পক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তোদের জীবন ধ্বংস করে দিব। আর সুযোগমতো পেলে জানে মেরে ফেলবো।
এ বিষয়ে মো. শাহা আলম বেপারী বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি অভিয়োগ দায়ের করেছেন। তিনি জানান, তার মায়ের নামে ক্রয়কৃত ২ শতাংশ জমি তারা নিজেদের নামে নামজারীসহ সরকারি খাজনাদী পরিশোধ করে আসছে।
জমিটি রূপগঞ্জ থানাধীন ইছাপুরা সাকিনস্থ পশি মৌজাস্থিত খতিয়ান-২৫১০, জোত নং-২৫১১, এসএ ৩৯৮, আরএস ১৩৪৫, যার বিডিএস খতিয়ান নং- ১১০৮২, বিডিএস দাগ নং- ১১০৬২, জমির পরিমাণ ০২ (দুই) শতাংশ। এই জমিতে সীমানা প্রাচীর বিদ্যমান থাকা অবস্থায় ভূমিদস্যু সোহেল রানা ও তার সিন্ডিকেট বাহিনী নিয়ে উল্লেখিত জমিতে জবর দখল করে আরেকটি সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছে। এতে সে (শাহা আলম বেপারী) সহ তার আত্মীয়স্বজনরা বাধা প্রদান করলে আমাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে সোহেল রানা।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, সোহেল রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি এবং কয়েকবার ঘটনা স্থলে ফোর্স পাঠানো হয়েছে এবং তাদের একাধিকবার থানায় হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তারা আইনের তোয়াক্কা না করে অন্যের জমি অবৈধভাবে জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত আছি।
বিআলো/এফএইচএস