সময় শেষ জকোভিচের
স্পোর্টস ডেস্ক: এমন সব মুহূর্ত নোভাক জকোভিচের জন্যই যেন তৈরি হয়ে থাকত। ম্যাচে পিছিয়ে আছেন, যেই না সুযোগ এল, দু’হাতে লুফে নিলেন, এরপর ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিপক্ষকে শেষ করে দিলেন।
উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে গতকাল তৃতীয় সেটের শুরুতেই সেই বিশেষ মুহূর্তটা এল। এমন সব মুহূর্ত দুই হাতে লুফে নেওয়ার মতো খেলোয়াড় টেনিস ইতিহাসে খুব কমই আছেন নোভাক জকোভিচ সেই বিরল প্রজাতির একজন। সারা ম্যাচে যত ব্যথা, যত ঝড়-তুফান, সব কিছু পেছনে ফেলে ঠিক এমন একটা জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প যে কতবার তিনি লিখেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। সে চেষ্টাটা তিনি করলেন ইয়ানিক সিনারের বিপক্ষেও।
তবে এবার সেই চেষ্টা ধোপে টিকল না। ৩০-৩০ পয়েন্টে সিনার যখন সার্ভ করছিলেন, তখন একটি তুলনামূলক সহজ ব্যাকহ্যান্ডের সুযোগ পান। কিন্তু শটটা তিনি কি-না কোর্টেই রাখতে পারলেন না! পাঠালেন কোর্টের অনেক বাইরে।
পরের পয়েন্টেই ফের একবার ভুল করলেন সিনার। এবার সুযোগটা লুফে নিলেন। সেন্টার কোর্টে হাত মুঠো পাকিয়ে উদযাপনও করলেন। দেখে মনে হলো, পুরনো সে ‘যোদ্ধা’ জকোভিচই বুঝি আবার ফিরে এলেন।
কিন্তু বাস্তবতা ছিল একেবারে আলাদা। এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোতে জকোভিচের চাঞ্চল্য দেখে মনে হতে পারে, এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি। তবে সেই মুহূর্তগুলো আর আগের মতো ফল দিল না। সিনার নিজেকে সামলে নিলেন দ্রুত। দখল নিয়ে নেন ম্যাচের।
ক্ষণিকের বিভ্রম কাটিয়ে আবার বাস্তবতায় ফিরে আসতে হয়। এই ম্যাচে যে তিনিই ছিলেন সেরা খেলোয়াড়। উইম্বলডনে জকোভিচ খুব কম মাচেই সরাসরি সেটে হেরেছেন। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, গতকালের ম্যাচের আগে ৪ বার। ৫ নম্বরটা ধরা দিল এবারের সেমিফাইনালে। ২ ঘণ্টার কম সময়ে সরাসরি হারতে হয় ৩৮ বছর বয়সী এই সার্বিয়ান কিংবদন্তিকে।
আপনি বলতেই পারেন, এই ৩৮ বছর বয়সে এসে সেমিফাইনালে পৌঁছানোটাই তো বিশাল সাফল্য। কিন্তু জকোভিচ তো এমন কেউ নন, যিনি শুধু সাফল্য খোঁজেন, তার ‘টু ডু লিস্টে’ তো এখন সবার ওপরে আছে একটা জিনিস, ‘পূর্ণতা’; রেকর্ড ২৫ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে ক্যারিয়ারের মধুরেন সমাপয়েৎ। উইম্বলডন তার জন্য ছিল প্রজেক্ট ২৫-এর সেরা সুযোগ। সে সুযোগটা হাত ফসকে বেরিয়ে গেল তার। সেই স্বপ্নটাও সমাধিস্থ হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে।
তরুণ সিনারের চোট ছিল এই ম্যাচের আগে। তাই লড়াইটা দীর্ঘ হবে বলেই ধারণা করা ছিল। জকোভিচ অভিজ্ঞতা দিয়ে ম্যাচকে টেনে নিয়ে যাবেন, আসল খেলটা দেখাবেন চতুর্থ কিংবা সম্ভাব্য পঞ্চম সেটে; এমন স্ক্রিপ্ট তো চিরচেনা! কিন্তু ম্যাচে ঘটল উল্টো ঘটনাটা। পুরো ম্যাচে সিনার জকোভিচকে পাত্তাই দিলেন না, দেখে মনেই হলো না, চোটের কারণে তিনি ম্যাচে নেমেছেন পুরো ফিট না হয়েই!
বেসলাইন থেকে খেলার জন্য বেশ পরিচিতি ছিল জকোভিচের। এই ম্যাচে সিনার তাকে সরিয়ে আনলেন সে ‘কমফোর্ট জোন’ থেকে। তাতেই সহজাত খেলাটা খেলতে পারলেন না। নিজের ওপরও বোধ হয় একটু বিরক্ত ছিলেন জকোভিচ, নাহয় শেষের দিকে তিনি বলের কাছে যাওয়ার চেষ্টাটাও করবেন না কেন? এমনটা একবার নয়, হয়েছে একাধিকবার!
আরও একটা কারণ হতে পারে তার শরীর। জকোভিচের লম্বা সাফল্যে বড় একটা অবদান ছিল তার শরীরের। অদম্য গতি, চটজলদি স্লাইড, আর অদ্ভুত শারীরিক নিয়ন্ত্রণ তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে চিনিয়েছিল। তবে এই সেমিফাইনালে যেন সেই শরীরটাই আর সায় দিচ্ছিল না।
জকোভিচ ম্যাচ শেষে নিজেই বললেন, ‘প্রতিদিনের কাজ- কর্মে ক্লান্ত হয়ে যাই মাঝে মাঝে।’ তারই ফল, অবধারিত হার।
এবারই যে শেষ নয়, জকোভিচ সেটা জানান দিয়ে গেলেন ম্যাচ শেষে। বছর শেষের ইউএস ওপেন সামনে। সেখানেও দেখা যাবে তাকে, যদি শরীর সায় দেয়। তবে ২৫তম গ্র্যান্ড স্ল্যামের সোনার হরিণের দেখা পেয়ে যাবেন, সেটা জোর গলায় বলা যাচ্ছে না। তার হারের ‘প্যাটার্ন’ বলে দিচ্ছে, তার সময়টা শেষই।
বিআলো/শিলি