চাঁদা তোলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে-স্লোগানের নেপথ্যে কী?
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয়োজিত মিছিলে উচ্চারিত একাধিক স্লোগান রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে লক্ষ্য করে দেওয়া স্লোগান-‘চাঁদা তোলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে’-নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা, বিতর্ক এবং সমালোচনা।
গত শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে আয়োজিত মিছিলে এই স্লোগান দেওয়া হয়। তবে নানা সূত্র বলছে, এসব মিছিলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একাধিক ছাত্রসংগঠন ‘প্রভাব’ ফেলেছে।
স্লোগানগুলোতে একদিকে বিএনপির যুব সংগঠনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে, অন্যদিকে তারেক রহমানকে সরাসরি দায়ী করে অশোভন ভাষার ব্যবহার করা হয়। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহল প্রশ্ন তুলছে-এই মিছিল ও স্লোগানগুলো আসলেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছিল, নাকি এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক চক্রান্তের অংশ?
বিএনপির পাল্টা অবস্থান-
বিএনপি বলছে, মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পাঁচজন যুবদল কর্মীকে ইতোমধ্যে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, এই নির্মম ঘটনাটি দেশের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি সমাজকে আরও অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি কোনোভাবেই দায় এড়াচ্ছে না। অভিযোগ পেলেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। এরপর কাজটি সরকারের, তারা কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেটাই প্রশ্ন।
তারেক রহমানকে টার্গেট করাই উদ্দেশ্য-
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই স্লোগানের লক্ষ্য মূলত তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন করা এবং তাকে বিতর্কের মধ্যে ফেলা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারেক রহমান যে রাজনৈতিক পরিপক্বতা ও নেতৃত্বগুণ দেখিয়েছেন, তাতে তাকে ঘিরে এক ধরনের জনআস্থা তৈরি হয়েছে। এটি একটি গোষ্ঠীর সহ্য হচ্ছে না বলেই এই ধরনের কুৎসা ও স্লোগান ছড়ানো হচ্ছে।
তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্যেও এ উদ্বেগ প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, ধীরে ধীরে অদৃশ্য শত্রু দৃশ্যমান হচ্ছে। ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি।
রাজনীতিকদের মতামত-
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তারেক রহমান এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত। কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন, দলকে শৃঙ্খলায় আনছেন-এটাই নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, অপরাধী যারাই হোক, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু একটি দল বা একটি নেতাকে দায়ী করা উচিত নয়। এতে অভ্যুত্থান-পরবর্তী শক্তিতে ফাটল ধরার আশঙ্কা তৈরি হয়।
অতীতের প্রেক্ষাপট
বিশ্লেষকরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তারেক রহমানকে নিয়ে ‘চাঁদাবাজি’ ও ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ নতুন নয়। এক-এগারোর সময় থেকে তাকে টার্গেট করে একাধিক মামলা হয়েছে, যার কোনোটিরই বিচারিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাদের মতে, বর্তমানের এমন স্লোগান ও মিছিল সেই পুরনো ষড়যন্ত্রেরই আধুনিক সংস্করণ।
বিআলো/এফএইচএস