জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ আজ থেকে শুরু
৭টি ক্ষেত্রে পদক পাচ্ছেন ১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান— মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ আজ (২২ জুলাই) থেকে শুরু হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য— ‘অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি’। সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৭টি ক্ষেত্রে ১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
গতকাল সকালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বলেছেন, জাতীয় মৎস্য নীতিমালা অনুযায়ী পদকপ্রাপ্তদের স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক প্রদান করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেবেন।
তিনি বলেন, ২২-২৮ জুলাই আয়োজিত এ সপ্তাহ দেশব্যাপী কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একযোগে পালন করা হবে। গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবারের আয়োজন বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে।
সপ্তাহ উপলক্ষে মৎস্য পদক বিতরণের পাশাপাশি দেশজ মাছ সংরক্ষণে সচেতনতামূলক র্যালি, সেমিনার, আলোচনা সভা, কর্মশালা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ এখন মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ
ফরিদা আখতার জানান, বাংলাদেশে ৩৮.৬ লাখ হেক্টর অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়, ৮.৫ লাখ হেক্টর বদ্ধ জলাশয় এবং ১ লাখ ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক জলসীমা রয়েছে। এই জলাভূমিগুলোতে মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও উৎপাদনে সরকার নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যার ফলে দেশ এখন মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশে বার্ষিক মাছের উৎপাদন ৫০ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়েছে। যার ফলে মাথাপিছু মাছের প্রাপ্যতা দৈনিক ৬৭.৮০ গ্রামে পৌঁছেছে, যা প্রয়োজনীয় চাহিদা (৬০ গ্রাম) থেকেও বেশি।”
মৎস্য খাতে জিডিপি ও কর্মসংস্থান
মৎস্য উপদেষ্টা জানান, মৎস্য খাত দেশের মোট জিডিপির ২.৫৩ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির ২২.২৬ শতাংশ। সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২ কোটি মানুষ— যার মধ্যে ১২ লাখ নারী—এই খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
টেকসই ব্যবস্থাপনা ও অভয়াশ্রম
তিনি বলেন, “দেশজ প্রজাতির মাছ রক্ষা ও টেকসই উৎপাদন নিশ্চিতে ৬৬৯টি অভয়াশ্রম পরিচালিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এর সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।” মাছের জেনেটিক বৈচিত্র্য ও ইকোসিস্টেম সংরক্ষণে জোর দিয়ে তিনি বলেন, “পরিবেশবান্ধব মাছ চাষ ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় গবেষণার ভূমিকা বাড়ানো হয়েছে।”
সামুদ্রিক নিষেধাজ্ঞা ও সহায়তা কার্যক্রম
উপদেষ্টা জানান, গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে এবার সামুদ্রিক মাছের প্রজনন নিরাপদ রাখতে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ সময় ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ১২ লাখ ৬৫ হাজার জেলে পরিবারকে ১ লাখ ৪ হাজার মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়। প্রস্তাব রয়েছে পরিবারপ্রতি ভিজিএফ বাড়িয়ে ৫০ কেজি করার।
দাদনের দুষ্টচক্র থেকে মৎস্যজীবীদের রক্ষা এবং সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মো. ইমাম উদ্দীন কবীর, সৈয়দা নওয়ারা জাহান এবং মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ।
বিআলো/তুরাগ