বার্ন ইউনিটে প্রতিটি মুহূর্ত যুদ্ধের মতো: আগুনে দগ্ধ হলে কী করবেন, কী করবেন না
নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ শিক্ষার্থীরা এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। বেশিরভাগই চিকিৎসাধীন আছেন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে। চিকিৎসকদের মতে, বার্ন রোগীদের জন্য প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে ওঠে একেকটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধ।
অগ্নিদগ্ধদের প্রাথমিক পরিচর্যা থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা পর্যন্ত রয়েছে নানা জটিলতা। এসব বিষয়ে জরুরি পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়াহিদা খান চৌধুরী।
আগুনে পোড়া মানেই শুধু ত্বকের ক্ষতি নয়
সাধারণ মানুষ ভাবেন শুধু চামড়াই পুড়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবে পোড়া মানেই পুরো শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া-বলেন ডা. ওয়াহিদা।
পোড়ার ফলে দ্রুত শরীরে পানি ও প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেয়, যা কিডনি বিকল করে দিতে পারে, শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ ঘটাতে পারে এবং এমনকি মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।
তাৎক্ষণিক করণীয়: যা করবেন
১. দ্রুত ঠান্ডা পানি ঢালুন-পোড়ার স্থানে ৩০ মিনিট ধরে সাধারণ পানি ঢালুন।
২. কাপড় আটকে গেলে টানবেন না—জীবাণুমুক্ত পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন।
৩. হাসপাতালে দ্রুত নিন-বাসায় চিকিৎসার চেষ্টা নয়, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যান।
যা কখনোই করবেন না
-
বরফ দেবেন না-এতে টিস্যু আরও নষ্ট হয়।
-
টুথপেস্ট, মধু বা ঘি ব্যবহার করবেন না-এসব জিনিস ইনফেকশন বাড়ায়।
-
নিজে ওষুধ দিয়ে বসে থাকবেন না-প্রথম ২৪ ঘণ্টা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ও পরিচর্যা
-
হালকা পোড়ায় অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করা যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নয়।
-
প্রোটিন, জিঙ্ক ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ জরুরি।
-
গভীর পোড়ায় স্কিন গ্রাফট বা প্লাস্টিক সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।
-
রোদে পোড়া স্থানে কালচে দাগ কমাতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা দরকার।
-
ফিজিওথেরাপি করতে হবে শক্ত হয়ে যাওয়া ত্বক নমনীয় রাখতে।
মানসিক পরিচর্যার গুরুত্ব
শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি বার্ন রোগীরা ভুগে মানসিক যন্ত্রণায়। চিকিৎসার পাশাপাশি পরিবার ও প্রিয়জনের সহানুভূতি, আশ্বাস এবং ভালোবাসা রোগীর সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
“শিশুদের ক্ষেত্রে গল্প বলা, খেলনা দেওয়া কিংবা পাশে থাকা-এসবই মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে,” বলেন ডা. ওয়াহিদা।
সহানুভূতির চোখে তাকান, করুণার নয়
ডা. ওয়াহিদা খান বলেন, আগ্নিদগ্ধদের দিকে করুণার নয়, সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকানো উচিত। সময়মতো চিকিৎসা, সঠিক পরিচর্যা আর সামাজিক সহায়তা পেলে তারা নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেন।
সংক্ষেপে মনে রাখুন:
✅ ঠান্ডা পানি, ❌ বরফ
✅ হাসপাতাল, ❌ ঘরোয়া টোটকা
✅ চিকিৎসক, ❌ অনুমাননির্ভর ওষুধ
✅ সহানুভূতি, ❌ করুণা
বিআলো/এফএইচএস