• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    মাইলস্টোন কলেজ এখন যেন এক শোকস্তম্ভ 

     dailybangla 
    23rd Jul 2025 11:49 am  |  অনলাইন সংস্করণ

    নিজস্ব প্রতিবেদক: পোড়া গন্ধ এখনও ভাসছে বাতাসে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে শ্বাস আটকে আসে। বিমানের বিস্ফোরণে দগ্ধ ভবনের নিঃশব্দ দেয়াল, রক্তমাখা খাতার ছেঁড়া পাতা আর ছড়িয়ে থাকা স্কুলব্যাগ— সবই যেন হাজারো ক্ষতবিক্ষত আত্মার এক মূর্ত প্রতিচ্ছবি।

    পোড়া ক্লাসরুমের এক কোণে পড়ে আছে আধখাওয়া এক টিফিন বাটি, একটি ছেঁড়া রুটি। শিক্ষক রুমে ভাত-তরকারি খোলা থালায় এখন ধুলোর আস্তরণ। যেন এই দৃশ্যগুলোই পুরো ঘটনার হৃদয়ভাঙা প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ৬ মিনিট। কেউ ক্লাস করছিলেন, কেউ টিফিন খাচ্ছিলেন, কেউ নিচ্ছিলেন প্রস্তুতি। ঠিক তখনই আকাশ ফেঁড়ে নিচে নেমে আসে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান। মুহূর্তেই নির্ভরতার প্রতীক মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ রূপ নেয় ধ্বংসস্তূপে। চিৎকার, বিস্ফোরণের বিকট শব্দ, পোড়া বইয়ের গন্ধ আর মানুষের ভিড়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে বিভীষিকার এক নির্মমতা।

    ২৪ ঘণ্টা পরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায় বিরাজ করছে এক ধরনের বোধগম্যহীন নীরবতা। ধ্বংসস্তূপের পাশেই পড়ে আছে সেই রুটি— ছেঁড়া, পুড়ে যাওয়া, আর খাওয়া হয়নি। কেউ হয়তো ঘণ্টা বাজার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু ঘণ্টা আর বাজেনি।

    এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৩২ জন, যাদের ২৫ জনই শিশু। আহত হয়েছেন অন্তত ১৬৫ জন। অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

    জাতীয় বার্ণ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক শিশুর শরীরের অর্ধেকের বেশি পুড়ে গেছে। দগ্ধদের অনেকের পরিচয় মিলছে না মুখ দেখে, শনাক্ত করা হচ্ছে জুতা বা মোজার সূত্র ধরে। এখনও পড়ে আছে ছোট ছোট জুতা— কোথাও এক জোড়া, কোথাও এক পা’র, আবার কোথাও শুধু মোজা—জুতা নেই।

    দুর্ঘটনার পর জাতি শুনেছে শিশুদের চিৎকার, কাঁদা আর্তনাদ। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস এবং স্থানীয়রা মিলে পুড়ে যাওয়া দেহগুলো উদ্ধার করেছেন।

    এক মা যিনি সকালে রুটি বানিয়ে সন্তানের ব্যাগে দিয়েছিলেন, সেই রুটি আর খাওয়া হয়নি। আধা খাওয়া রুটিটিই এখন একমাত্র সাক্ষী হয়ে পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপের পাশে। সেই রুটি যেন জাতির শোকের প্রতীক— অপূর্ণ আহার, অপূর্ণ জীবন।

    একজন শিক্ষক বলছিলেন—ছেঁড়া খাতায় এক শিক্ষার্থী লিখেছিল, “আমি বড় হয়ে ডাক্তার হব, ইঞ্জিনিয়ার হব।” সেই পাতাটাও আজ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। স্বপ্নের সঙ্গে পুড়ে গেছে টিফিনের জন্য রাখা বিস্কুটের প্যাকেট, পানির বোতল।

    মাইলস্টোন স্কুল এখন শুধুই একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়—এটি পরিণত হয়েছে এক বেদনাবিধুর স্মৃতিস্তম্ভে। দেয়ালের লেখাগুলো এখন কেবল স্মরণীয় হয়ে আছে— “Welcome to Classroom”, “Work Hard”, “Believe in Yourself”, “Try New”।

    জীবন মাঝে মাঝে এমনই নির্মম। ছেঁড়া রুটি, পোড়া খাতা আর নিখোঁজ স্বপ্ন নিয়ে আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি—একটি অভিশপ্ত জাতি হয়ে। শ্রেণিকক্ষে আজ আর ঘণ্টা বাজেনি। শব্দ হয়নি কলমের।

    বিআলো/শিলি

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2025
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    25262728293031