শ্রমিকরা অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিতে, শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে দাবি
সুরক্ষাবিহীন শ্রমিক বাস্তবতায়, সংস্কার সুপারিশেই মুক্তির পথ
রতন বালো: শ্রমিকরা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন। তাদের কাজের সঠিক মূল্যায়ন হয় না এবং প্রায়ই তারা শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হন। এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। বেশির ভাগ সময়ই মহিলা শ্রমিকরা শিশু ও প্রবীণদের দেখাশোনা থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত তাদের শ্রম পরিবারে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিশেষ করে নারী সদস্যদের আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পালন করে আসছে বলে মনে করছেন শ্রম বিশেষজ্ঞমহল।
তারা বলেছেন, এত বড় অবদানের পরও, শ্রমিকরা শ্রমশক্তির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ, অনানুষ্ঠানিক এবং সুরক্ষাবিহীন একটি অংশ হিসেবেই রয়ে গেছে। জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন ও শ্রমিক অধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জুলাই সনদে কমিশনের সুপারিশসমূহের প্রতিফলন রাখা এবং একটি স্থায়ী শ্রম কমিশন গঠনের উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করেন।
তারা বলেন, বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধনের মাধ্যমে শ্রম খাতে সংস্কারের পথে কিছু অগ্রগতি করা সম্ভব হলেও গৃহশ্রমিকদের জন্য এখনো আনুষ্ঠানিক আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে তারা প্রতিনিয়ত অসুরক্ষিত ও অনিরাপদ কর্মপরিবেশ, অন্যায্য মজুরি, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন এবং সামাজিক সুরক্ষার অভাবের মতো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।

এ বিষয়ে সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস আয়োজিত শ্রম সংস্কার কমিশন-২০২৪ এর সুপারিশ ‘শ্রমজগতের রূপান্তর-রূপরেখা’ বাস্তবায়নে করণীয় বিষয়ে নারী অধিকার সংগঠন, জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনসমূহের নারী নেতৃবৃন্দ এবং তৈরি পোশাক খাতের ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন সমূহের মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য ও সুপারিশ করা হয়। শ্রমিক নেতা বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন এর সভাপতি এবং বিলস উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিল্স-এর যুগ্ম মহাসচিব ও নির্বাহী পরিচালক এবং শ্রম সংস্কার কমিশন- ২০২৪ এর প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ।
প্রথম পর্বে সভা সঞ্চালনা করেন বিলস-এর পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ এবং দ্বিতীয় পর্বে সঞ্চালনা করেন বিল্স-এর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নইমুল আহসান জুয়েল। সভায় অতিথি ছিলেন শ্রম সংস্কার কমিশন ২০২৪ এর সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, আনোয়ার হোসেন এবং সাকিল আখতার চৌধুরী। সভায় কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশের সংক্ষিপ্তসার উপস্থাপন করেন এডভোকেট নজরুল ইসলাম।
সভায় দেশের খ্যাতনামা নারী অধিকার সংগঠন, জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের নারী নেতৃবৃন্দ এবং তৈরি পোশাক খাতের ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন সমূহের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। সভায় বক্তাগণ কমিশনের সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি, বিভিন্ন পক্ষের অংশগ্রহণে জাতীয় পর্যায়ে একটি প্লাটফরম তৈরি, সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে সুপারিশের বিষয়বস্তু অবহিতকরণের জন্য মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো এবং সরকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদানসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।সভায় প্রতিনিধিগণ কমিশনের প্রতিবেদনের নারী বিষয়ক সুপারিশসমূহ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের শ্রমিকদের মাঝে প্রচার এবং প্রসারের আহ্বান জানান। এ সময় অনেকেই বলেছেন, কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পর তারা গৃহশ্রমিকের ডেটাবেজ তৈরি শুরু করেছেন।
রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নারী শ্রমিক ও নারী অধিকারকর্মীদের একটি কনভেনশন আয়োজন করা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, কমিশনের সুপারিশসমূহ বুকলেট আকারে একটি ‘গাইড টু অ্যাকশন’ হিসেবে বিবেচনা করে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, কমিশনের কার্যক্রমের জন্য মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করে এবং যারা কমিশনের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে তাদের অবদান বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উল্লেখ করেন যে, মাঠপর্যায়ে সমস্যাগুলো এখনো প্রকট রয়ে গেছে যেমন, সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী নারী কর্মীরা এখনো মাতৃত্বকালীন ছুটি পান না। আমাদের মধ্যবিত্ত কাঠামোর মধ্যে এখনও বৈষম্য বিরাজমান, এবং সমস্যাগুলো যেমন বিভক্ত, তেমনি আমাদের শক্তিও বিভক্ত।
তিনি জোর দেন, সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সকল অংশীজনকে একত্র হয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কয়েকটি সংগঠন মিলে নারী অধিকার বিষয়ক যে দাবিগুলো দীর্ঘদিন ধরে তুলে আসছে, তা কমিশনের সুপারিশের মাধ্যমেই একটি স্বীকৃতি পেয়েছে।
শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, সকলের অভিমত, দাবি ও কার্যক্রমের সমন্বয় ঘটিয়ে পরিকল্পিতভাবে এগোতে পারলেই আমাদের লক্ষ্য পূরণ এবং কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তিনি সকল অংশীজনকে একত্র করে একটি যৌথ ফোরাম গঠনের আহ্বান জানান এবং কমিশনের সুপারিশসমূহ ব্যাপকভাবে প্রচার করার জন্য সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দেন।
বিআলো/তুরাগ