হাতের কাজে মস্তিষ্কের যত্ন: তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় হচ্ছে হস্তশিল্প
অনলাইন ডেক্স: নরম সুতার কোমলতা, সূঁচের খচখচ শব্দ আর ‘বুনন–পার্ল–রিপিট’ ধারা–কখনও একঘেয়ে, তবু তৃপ্তিদায়ক। এই ধরনের বোনা ও হস্তশিল্প কাজ আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে জেনারেশন জেড–এর মধ্যে। ইভেন্টব্রাইটের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, তরুণরা এখন ডিজিটাল ক্লান্তি থেকে মুক্তির খোঁজে ফিরছে ‘গ্রানিকোর’-অর্থাৎ দাদি–নানিদের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের দিকে।
তবে এটা শুধুই শখের কাজ নয়। গবেষণা বলছে, এইসব ধীরগতির হাতে–কলমে করা কাজ মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী। এগুলো স্মৃতি, মনোযোগ, মোটর ফাংশন এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
নিউইয়র্কের আর্ট থেরাপিস্ট এমিলি শার্প বলেন, দুই হাতে ছন্দময় কাজ করায় বাইল্যাটারাল স্টিমুলেশন হয়, যা ইএমডিআর থেরাপির মতো কাজ করে। এটি কর্টিসল কমিয়ে সেরোটোনিন ও ডোপামিন বাড়িয়ে মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের নিউরোলজিস্ট আলভারো পাস্কুয়াল–লিওন বলেন, ধীর ও মনোযোগী হস্তশিল্প কাজ ডোপামিন সিস্টেমকে সক্রিয় করে, মনোযোগ বাড়ায় এবং এমনকি বয়সজনিত স্মৃতিভ্রংশ রোধেও সাহায্য করতে পারে।
তবে শুধু জানা কাজ করলেই হবে না। পাস্কুয়াল–লিওন বলেন, “নতুন কিছু শেখার মাধ্যমেই মস্তিষ্কে নতুন নিউরাল সংযোগ তৈরি হয়। আপনি যদি আগে বোনা না জানেন, তবে শেখা শুরু করুন। আর জানলেও নতুন প্যাটার্ন বা পদ্ধতি শিখে ব্রেইনের চ্যালেঞ্জ ধরে রাখুন।”
জেরোন্টোলজিস্ট লেকলিন আইচেনবার্গার জানান, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্নায়ু কোষ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। কিন্তু ক্রস–স্টিচ, কাঠকাটা, পটারি কিংবা বুক বাইন্ডিংয়ের মতো কাজ স্নায়বিক সংযোগ টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
তিনি বলেন, এই ধরনের শখ শুধু ব্রেইন গেমের মতো প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান নয়, বরং এটি আবেগ, সংযোগ ও মানসিক প্রশান্তির উৎস।” বিশেষ করে যখন এই কাজগুলো গ্রুপে করা হয়–যেমন ক্র্যাফটিং ওয়ার্কশপ বা বোনার ক্লাস, তখন সামাজিক যোগাযোগ তৈরি হয় এবং একাকীত্ব কমে।
সাম্প্রতিক একটি মেটা–স্টাডিতে উঠে এসেছে, নিয়মিত হস্তশিল্প মস্তিষ্ক ও মন—উভয়ের জন্য উপকারী। এমনকি পারকিনসন রোগীদের ক্ষেত্রেও এই ধরনের কার্যক্রম স্মৃতি ও মানসিক স্থিতি উন্নত করতে সহায়ক।
আইচেনবার্গার বলেন, আমরা বয়সের সঙ্গে শরীরের রোগে যতটা মনোযোগ দিই, মনের যত্নে ততটা দিই না। অথচ এই সৃজনশীল কাজগুলো মানসিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
বিআলো/এফএইচএস