সাজিদের হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে ইবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল
ইবি প্রতিনিধি: সাজিদ হত্যার বিচারের দাবিতে ফের সরব হয়েছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। এদিকে সন্ধ্যায় জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ সোমবার (৪ আগস্ট) বেলা এগারোটার দিকে ক্যাম্পাসের বটতলা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হয় শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের সাথে ঐক্যমত পোষণ করে যুক্ত হন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট, শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসানসহ ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এসময় শিক্ষার্থীদের ‘বিচার বিচার বিচার চাই, সাজিদ হত্যার বিচার চাই’, ‘কাল বিলম্বের সুযোগ নাই, সাজিদ হত্যার বিচার চাই’, ‘জুলাই যোদ্ধা কবরে খুনি কেন বাহিরে’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই খুনিদের ফাসি চাই’, ‘রশি লাগলে রশি নে, খুনীদের ফাঁসি দে’, ‘ক্যাম্পাসে লাশ পড়ে প্রশাসন কি করে’, ‘খুনিদের কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘প্রশাসনের তালবাহানা, মানি না মানবো না’, ‘খুন হয়েছে আমার ভাই, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনী কেন বাহিরে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এসময় তারা বলেন, “আমাদের নিরাপত্তার জন্য প্রক্টরিয়াল বডি এবং প্রশাসনের লোকজন যদি ক্যাম্পাসে অবস্থান করতেন তাহলে হয়তো সাজিদ আব্দুল্লাহ আজ আমাদের মাঝে থাকতেন। তাই প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ক্যাম্পাসে অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। ভিসেরা রিপোর্টে সাজিদকে যে হত্যা করা হয়েছে এটা প্রমাণিত হয়েছে। যদি প্রশাসন এর সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে না পারে তাহলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে কি ব্যাবস্থা নেয়া দরকার আমরা তা নিবো।”
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “আজকে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের পর আমাদের একটি নিরাপদ প্রশাসন পাওয়ার কথা ছিল। এমনক একটি প্রশাসন পাওয়ার কথা ছিল যে প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। কিন্তু আমরা আমাদের ভাইয়ের লাশ পেলাম। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, সাজিদের খুনীকে খুজে বের করতে হবে। ঙদি না পারেন তাহলে আমরা প্রশাসনকে আসসালামু আলাইকুম বলতে বাধ্য হবে। আমাদের সকল দাবি আপনাদের পূরণ করতেই হবে। সাজিদের খুনের বিচার করতেই হবে হবে। যদি সাজিদের খুনীদের বের করতে না পারেন তাহলে গদি ছেড়ে দিন। তাই আপনারা দ্রুত আসুন, শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলুন। শিক্ষার্থীরা কি আপনাদের রাখবে নাকি চলে যেতে বাধ্য করবে সে ব্যাপারে কথা বলুন। আপনারা না আসার আগ পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাবো না। দাবি একটাই সাজিদের হত্যাকারীদের বিচার চাই।”
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, “আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি সাজিদ আব্দুল্লাহর হত্যার বিচারের দাবিতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে একটি ধন্যবাদ দিতে হয় কারণ দেরিতে হলেও তাদের একটু শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে যে, তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, উচ্চতর তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনে পিবিআইয়ের মাধ্যমে সাজিদের খুনীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। ততক্ষণ আমরা হাতে চুড়ি পড়ে বসে থাকবো না। আমরা প্রশাসন এখানে এসে কথা বলবে। তা না হলে আমরা এখান থেকে উঠবো না।”
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, “আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে যেন কেউ এই আন্দোলনকে অন্য কোনো দিকে ঘুরিয়ে দিতে না পারে৷ আমরা চাই এই তদন্ত পিবিআইকে হস্তান্তর করা হোক। কতদিনের মধ্যে হত্যাকারীদের ধরা হবে তা জানাতে হবে। পিবিআইকে সময়ে সময়ে আমাদেরকে তদন্তের আপডেট দিতে হবে। সাজিদ একজন জুলাই যোদ্ধা ছিল। প্রতিটি জুলাই যোদ্ধার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনারা যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারেন, আর এক মিনিটও ওই গদিতে থাকবেন। আজ আমাদের সহযোদ্ধার যে পরিণতি হয়েছে, কাল আমি আপনিও সেই পরিণতির শিকার হতে পারি। তাই সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পরিশেষে বলতে চাই অতিদ্রুত সাজিদ হত্যায় জড়িতদের খুজে বের করতে হবে।”
এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “গতদিন বলেছিলাম ভিসেরা রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একশনে যাবে। সাজিদের হত্যাকাণ্ডে খুনিদের অবশ্যই বিচার হবে। যেহেতু সাজিদ হত্যা হয়েছে সেহেতু এটা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে যাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সকল সহযোগিতা করবে। ভিক্টিমের পরিবারকে খবর দেয়া হয়েছে আজকের মধ্যে মামলা করা হবে। যেহেতু আগেই জিডি এন্ট্রি করা হয়েছিল সেহেতু মামলা ফরমাল ওয়েতে হবে। আজকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় সিন্ডিকেট মিটিং ডেকেছি। আমি তোমাদের নিশ্চিত করছি মিটিংয়ে তোমাদের দাবি অনুসারে সিদ্ধান্ত হবে, দোষীদের বিচার নিশ্চিত হবে এবং কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তোমরা ক্লাস পরীক্ষা সহ একাডেমিক সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করো। নতুন করে হত্যার বিচার চাইতে তোমাদের আমার কাছে আসা লাগবে না আমি নিজেই তদন্তের সকল তথ্য সময় মতো জানাবো।”
উল্লেখ্য, গত রবিবার (৩ আগস্ট) বিকেলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে পাওয়া ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যু শ্বাসরোধজনিত শ্বাসকষ্টে হয়েছে, যা মৃত্যুর আগে এবং এটি হত্যাজনিত। গত ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় শাহ আজিজুর রহমান হলসংলগ্ন পুকুরে তার মরদেহ ভেসে থাকতে দেখা যায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও পুলিশের উপস্থিতিতে তা উদ্ধার করা হয়। সাজিদ আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং তার বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে।
বিআলো/ইমরান