নবীনগরে অবৈধ বালু উত্তোলন-অস্ত্র মহড়া, মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার শঙ্কায় গ্রাম
এস এম অলিউল্লাহ, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের মেঘনা নদী আজ অবৈধ অস্ত্রের মহড়া ও বালু সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। নদীর তীরবর্তী চরলাপাং, মানিকনগর, সাহেবনগরসহ আশপাশের গ্রামগুলো রাতদিন শতাধিক ড্রেজারের গর্জনে কেঁপে উঠছে। ফসলি জমি, মসজিদ-মাদ্রাসা ও শত শত বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার অপেক্ষায়। অথচ প্রশাসন দাঁড়িয়ে আছে নির্বিকার দর্শকের ভূমিকায়।
গত ১০ আগস্ট বিকেলে ঘটে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। সোনারগাঁও থেকে সলিমগঞ্জের গণিশাহ মাজারে ওরশে অংশ নিতে যাওয়া একটি ট্রলার দড়াভাঙ্গা এলাকায় বালুবোঝাই বুলড্রেজারের সঙ্গে সংঘর্ষে ডুবে যায়। এতে প্রাণ হারান আশরাফ উদ্দিন (৪৪)।
সরকারি নথি অনুযায়ী, নাসিরাবাদ বালুমহাল ১৪৩২ বঙ্গাব্দ মেয়াদে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ৮ কোটি ৯৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ইজারা পেয়েছে সাহেবনগরের শাখাওয়াত হোসেনের প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স সামিউল ট্রেডার্স’। কিন্তু ইজারার শর্ত মানা হচ্ছে না। রাতদিন চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। এই ব্যবসায় জড়িত রয়েছে পার্শ্ববর্তী উপজেলা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বালুমহলকে ঘিরে চলছে সশস্ত্র পাহারা। প্রতিবাদ করলেই প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা মেহেদি হাসান সতর্ক করে বলেন, “এখনই ঐক্যবদ্ধ না হলে চরলাপাং, মানিকনগরসহ আশপাশের গ্রামগুলো মানচিত্র থেকে মুছে যাবে।”
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইজারাদার শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমরা সরকারি নিয়ম মেনেই কাজ করছি। অস্ত্র মহড়া বা রাতে বালু উত্তোলনের অভিযোগ সঠিক নয়। রাতে কোনো ড্রেজার চললে প্রশাসনকে বলেছি জব্দ করতে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব চৌধুরী জানান, তার কাছে অবৈধ কর্মকাণ্ডের একাধিক অভিযোগ এসেছে এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, “নিরাপত্তাজনিত কারণে বালুমহলে অভিযান জটিল, কারণ মাঝে মাঝে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তবে শিগগিরই যৌথ বাহিনী নিয়ে অভিযান চালানো হবে।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম জানান, নিয়ম মেনেই ইজারা দেওয়া হয়েছে। নিয়ম ভঙ্গের প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআলো/তুরাগ