বাংলাদেশে জাতি-ধর্মে ভেদাভেদ থাকবে না, এই দেশ সবার: সেনাপ্রধান
নিজস্ব প্রতিবেদক: সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, এই দেশ সবার। সম্প্রীতির এই বাংলাদেশে শত শত বছর ধরে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড়ি, বাঙালি, উপজাতি সবাই মিলে অত্যন্ত শান্তিতে আমরা বসবাস করে যাচ্ছি। সবাই একসঙ্গে এই দেশে সুন্দরভাবে ও শান্তিতে বসবাস করবো। এখানে কোনো জাতি-ধর্মে ভেদাভেদ থাকবে না। সবাই আমরা এ দেশের নাগরিক। সবার অধিকার এ দেশে আছে। সেভাবেই আমরা ভবিষ্যতে আমাদের সোনালী দিনগুলো দেখতে চাই।
সেনাপ্রধান শনিবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে জন্মাষ্ঠমীর শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মইন খানসহ অন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক বাসু দেব ধর প্রমুখ। পরে প্রদ্বীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে তিন বাহিনীর প্রধানরা জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আজকের এই আনন্দঘন শ্রীকৃষ্ণের হাজার হাজার ভক্ত এখানে উপস্থিত আছেন। এখানে বাদ্য বাজছে। এই আনন্দে আমাদের সঙ্গে নেওয়ায় সাধুবাদ জানাই। এই ঐতিহাসিক শুভ জন্মাষ্টমীর কেন্দ্রীয় মিছিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ করায় সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, আজকের এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হবে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ আমরা সব সময় বজায় রাখবো। এই দেশ সবার। নবম পদাতিক ডিভিশন আছে। আমরা সবাই মিলে সব সময় আপনাদের পাশে থাকবো।
সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, সারা বাংলাদেশে সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন আছে। সশস্ত্রবাহিনী আপনাদের সঙ্গে কাজ করে যাবে। আপনারা নিশ্চিন্তে দেশে বসবাস করবেন। ধর্মীয় সব পর্ব বা অনুষ্ঠান উদযাপন করবেন। আনন্দ উদযাপন করবেন। আমরা একসঙ্গে এই আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবো। তিনি আরো বলেন, আজকের এই জন্মাষ্টমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের যে আদর্শ, সেই আদর্শ এখান থেকে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ুক। এই আদর্শের ভিত্তিতে আমরা সুন্দরভাবে একসঙ্গে বাস করবো। এই আনন্দ মিছিল ১৯ ও ২০ শতকে একসময় হতো। তারপর এটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
আবার শুরু হয়েছে। আশা করি এই উৎসব ও মিছিল সব সময় জারি থাকবে। সশস্ত্রবাহিনীর পক্ষ থেকে যত ধরনের সাহায্য সহযোগিতা চান, সেটা আমরা দেবো। সেনাপ্রধান আশা প্রকাশ করেন যে জন্মাষ্টমীর এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। তিনি বলেন, এই আদর্শের ভিত্তিতেই আমরা একসঙ্গে বসবাস করবো, সামনে এগিয়ে যাবো। তিনি বলেন, আজকের এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হবে আমরা সবসময় সম্প্রীতি-সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবো। এই দেশ সবার, আমরা শান্তিতে সুন্দরভাবে বসবাস করবো। নিজের বেড়ে ওঠার স্মৃতিচারণ করে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আজিমপুর-পলাশী এলাকায় আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি। এ জায়গা আমার অনেক পুরোনো স্মৃতিবিজড়িত।
অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনীর প্রধান বলেন, শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা শুধু অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসই জোগায় না, ন্যায়ের পথেও চলতে শেখায়। এই বাংলাদেশ আমাদের সবার। স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আমাদের সবার পবিত্র দায়িত্ব। সবাই মিলে কাজ করলে বিশ্বের মানচিত্রে এই বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারব। নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল বলেন, আসুন, পারস্পরিক সহনশীলতার মাধ্যমে দেশকে আরো শক্তিশালী করি। শ্রীকৃষ্ণ যেন সমাজে ন্যায় ও আলোর সত্য প্রজ্জ্বলিত করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর জন্মাষ্টমীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা পলাশীর মোড় থেকে শুরু হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন পথ প্রদক্ষিণ করে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হয়।
বিআলো/ইমরান