ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে ঋণ: ইসলামী ব্যাংক থেকে ১৪ কোটি টাকা লোপাট
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: ব্যাংক মাফিয়া ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের যোগসাজশে ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ভুয়া কাগজপত্র ও নাম সর্বস্ব প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার ঋণ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে উঠে এসেছে ফিউচার এগ্রো কমপ্লেক্স প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি মৃত কোম্পানির নামে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট শাখা থেকে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে, যার কোনো প্রকৃত প্রকল্প বা কার্যক্রম নেই। কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. হাসান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি হাবিবুল্লাহর নেতৃত্বে এ অর্থ উত্তোলন করা হলেও এখন তারা ঋণ পরিশোধে অস্বাভাবিকভাবে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কোম্পানির পরিচালক তাসলিমা মারজান জানিয়েছেন ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ফিউচার এগ্রো কমপ্লেক্স লিমিটেডের প্রথম দিকের কার্যক্রম ছিল ময়মনসিংহের ত্রিশালে কয়েকটি পুকুরে মৎস্য চাষ। তবে ২০১২ সালের পর থেকে কোম্পানিটি কার্যত মৃত হয়ে যায় এবং এর কোন প্রকৃত কার্যক্রম ছিল না। তবুও ব্যাংক মাফিয়াদের সহায়তায় কোম্পানির নাম ব্যবহার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে মৎস্য পুকুরের লিজ দেখিয়ে ঋণ বরাদ্দ করা হয়। ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি কোম্পানির পরিচালক তাসলিমা মারজান ঋণ বন্ধের অভিযোগ তুললে কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যান হাসান ও এম ডি হাবিবুল্লাহ অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে পরিচালক তাসলিমা মারজানকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় বলে সূত্র মতে জানা যায়।
মিথ্যা মামলা এবং চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তাসলিমা মারজানের কোটি কোটি টাকার পারিবারিক সম্পত্তি নামমাত্র বায়না মূল্যে বুঝে নিয়ে ব্যাংকে বন্ধক দেয় চেয়ারম্যান হাসান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুল্লাহ। এই পরিস্থিতিতে তাসলিমা মারজান দেশ ছেড়ে চলে গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যাংক ঋণের দায় চাপানো হয় এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয় বলে জানা যায়। ঋণের এই টাকা পরবর্তীতে চেয়ারম্যান হাসান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুল্লাহ তাদের ব্যক্তিগত প্রজেক্টে সরিয়ে নেয় বলে অভিযোগ ওঠে। কোম্পানির ৩৩% শেয়ারের মালিক মো. হাসান ঋণ এর বিপরীতে কোন সম্পদ বন্ধক রাখেননি বলে জানা যায়।
২০২৪ সালের ২৩ নভেম্বর তাসলিমা মারজান পল্টন মডেল থানায় গিয়ে আইনি সহায়তা চাইলে কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাদের পরিবারসহ মীমাংসা মিটিংয়ে বসে। সেই মিটিংয়ে চেয়ারম্যান হাসান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুল্লাহ পাঁচ কোটি টাকার চেক প্রদান করে এবং জানিয়ে দেয় ২০২৫ সালের মধ্যে তাসলিমা মারজানের বন্ধকৃত সম্পত্তি মুক্ত করা হবে। তবে মিটিংয়ের পর থেকে তারা গা ঢাকা দেয় এবং কোম্পানির ঋণ পরিশোধের কোন উদ্যোগ নেয়নি।
এদিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বর্তমানে কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. হাসান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুল্লার বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সিআর ১৮৯/২৩, সিআর ৯৮/২৩, সিআর ১৭৩/২৪ এবং সিআর ১৯৫/২৩, উল্লেখ্য এসব মামলায় পরিচালক তাসলিমা মারজানকেও জড়ানো হয়েছে। একটি অডিট ফার্মের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কোম্পানিটির কোনো কার্যক্রম নেই কোনো সম্পদ নেই এবং প্রকল্পগুলো কেবল কাগজে-কলমে। বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই।
প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অবৈধ তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে হাবিবুল্লাহ অন্যায়ভাবে পরিচালক তাসলিমা মারজানকে হয়রানি করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জমি ক্রয়ের জন্য চেক নিয়ে চেকের টাকা পরিশোধ না করে উল্টো সেই চেকের ব্যাপারে পরিচালক তাসলিমা মারজানের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক চেক নেওয়ার অভিযোগ তুলে হাবিবুল্লাহ ও হাসান হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করেন বলে অভিযোগ তাসলিমা মারজানের। আদালতের আদেশে পুলিশ প্রশাসন ও পিবিআই আলাদাভাবে তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করে। উভয় রিপোর্টে হাবিবুল্লাহর অভিযোগ মিথ্যা বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। উভয় রিপোর্টের বিরুদ্ধে আবারও না রাজি আবেদন করে হাবিবুল্লাহ।
পরিচালক তাসলিমা মারজান ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তেমন কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। বর্তমানে তিনি ও তার পরিবার আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সচেতন মহলের প্রশ্ন বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে অবৈধ তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে ওঠা হাবিবুল্লাহ এবং হাসানের মত মাফিয়া সদস্যদের বিরুদ্ধে কি কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?
বিআলো/এফএইচএস