চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে স্বস্তি, প্রতিটি ধাপে ঝামেলামুক্ত সেবা
দালালচক্রের দৌরাত্ম্য কমে গেছে
অনলাইনে আবেদন, নির্ধারিত সময়েই হাতে পাসপোর্ট
সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী, চাঁদপুর: চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেবাগ্রহীতাদের জন্য তৈরি হয়েছে ঝামেলামুক্ত পরিবেশ। আবেদন গ্রহণ, ফিঙ্গার প্রিন্ট থেকে শুরু করে ডেলিভারি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ফিরেছে শৃঙ্খলা। ফলে ভোগান্তির বদলে স্বস্তি নিয়ে ফিরছেন পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কর্তৃপক্ষের নেয়া নানা উদ্যোগে অফিসের কার্যক্রমে গতি এসেছে। কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়াই সেবা পাচ্ছেন আগতরা।
ভুক্তভোগী সূত্রগুলো জানায়, দালাল চক্রের ফাঁদ ডিঙ্গিয়ে সহজে পাসপোর্ট পেতে পদে পদে হয়রানি ছিল অনেকটাই নিয়তির মতো।
তবে, অতীতে দালালচক্রের কারণে আবেদনকারীদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হতো। এখন সরাসরি অনলাইনে আবেদন ও নির্ধারিত ফি প্রদানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়েই হাতে আসছে পাসপোর্ট। প্রতিদিন গড়ে শতাধিক আবেদন জমা পড়ছে এবং দুই শতাধিক ই-পাসপোর্ট বিতরণ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট পেতে এখন প্রতিদিন গড়ে শতাধিক আবেদন জমা পড়ছে। অনলাইনে জমা দেয়া এসব আবেদনের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে গড়ে ২শ’ ই-পাসপোর্ট। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে অনলাইনে ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে পারছেন পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়েই মিলছে পাসপোর্ট।
চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কবির হোসেন ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার মরিয়ম খাতুন বলেন, বিদেশে যাওয়ার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট প্রয়োজন ছিল। দ্রুত পাসপোর্ট প্রয়োজন শুনে অনেকেই সহযোগিতার নামে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমি নিজে নিজে আবেদন করে পাসপোর্ট অফিসে এসে দেখি এখানে কোন ঝামেলা ছাড়াই সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এখানকার কর্মকর্তা, কর্মচারীরাও যথেষ্ট আন্তরিক। আবেদনের এক মাসের মধ্যেই পাসপোর্ট পেয়েছি।
চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান জানায়, ৪৮ পৃষ্ঠা ৫ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট জন্য সাধারণ ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা, জরুরি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা ও অতি জরুরি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা। ই-পাসপোর্ট ৪৮ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি ৮ হাজার ৫০ টাকা ও অতি জরুরি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা।
তিনি বলেন, সেবা প্রত্যাশীদেরে ঝামেলামুক্ত সেবা প্রদানে আমরা নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। অধিকাংশ আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। পুলিশ নেগেটিভ রিপোর্ট, মাল্টিপল একটিভ পাসপোর্ট, ব্যাকেন্ড ভেরিফিকেশনসহ নানা কারণে অল্প কিছু আবেদন পেন্ডিং আছে সেগুলো নিষ্পত্তি করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। ই-পাসপোর্টের প্রতি মানুষের যেন আগ্রহ বাড়ে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজও করছি।
উপ-পরিচালক আরো জানান, চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে বেশ কিছু পাসপোর্ট বিতরণের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু আবেদনকারী গণ পাসপোর্টগুলো সংগ্রহ করছেন না। ৩ মাসের অধিক হয়েছে এমন পাসপোর্টগুলো বিতরণের জন্য আবেদনকারীদের মোবাইলে ফোন করা হলে ফোন নাম্বার গুলো বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে প্রত্যেকের বাড়িতে পাসপোর্টটি সংগ্রহ করার জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। আবেদনকারীরা আবেদনের ক্ষেত্রে দুইটি মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করবে। একটি হলো আবেদনকারী নাম্বার অন্যটি জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিকটতম আত্মীয়র নাম্বার। তাহলে আবেদনকারী নাম্বারটি বন্ধ থাকলে অন্য নাম্বারে কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করতে সক্ষম হবে।
তিনি সাধারণ জনগণকে নতুন পাসপোর্ট বা সংশোনের ক্ষেত্রে দালালদের শরণাপন্ন না হয়ে অনলাইনে আবেদন করে সরাসরি নিজে এসে সেবা নেয়ার আহবানও জানান এই কর্মকর্তা। এতে ঝামেলা এড়ানো যাবে এবং স্বচ্ছভাবে সেবা পাওয়া সম্ভব হবে।
বিআলো/তুরাগ