ফরিদপুর জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে প্রকাশ্যে ঘুস বাণিজ্য
নিজস্ব প্রতিবেদক: ফরিদপুর জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে প্রকাশ্যে ঘুস লেনদেন চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দলিল রেজিস্ট্রি, জমির নকল সংগ্রহসহ রেকর্ড রুম থেকে বিভিন্ন কাগজপত্র পেতে হলে সেবা প্রার্থীদের ঘুস ছাড়া কোনো কাজই হয় না—এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
রেকর্ড রুমের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভুয়া দলিল তৈরি করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি ঘুস লেনদেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, রেকর্ড অফিসের কর্মচারী মো. মাসুদ আলী মোল্লার নেতৃত্বে ১০-১২ জন দালাল কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় সক্রিয়। গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল মানুষদের কাছ থেকে চুক্তি মোতাবেক টাকা নিলেও কাজ সম্পন্ন না করে নতুন অজুহাতে আরও টাকা দাবি করেন। এ ঘটনায় মাসুদ আলী মোল্লাকে মূল নায়ক হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবি, তিনি ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদাহ ইউনিয়নের জাহানপুর গ্রামের সুলতান মোল্লার ছেলে। গ্রামে তিনি শাহাবুদ্দীন মোল্লা নামে পরিচিত হলেও অফিসে মাসুদ আলী মোল্লা নামে পরিচয় দেন। চাকরির সুবাদে প্রায় দুই কোটি টাকার আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, প্রকাশ্যে ঘুস নিচ্ছেন মাসুদ মোল্লা। একটি জমির নকল তুলতে গ্রাহককে বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি অনিয়মের মাধ্যমে ভুয়া দলিলের নকল সরবরাহ করায় প্রকৃত জমির মালিকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
শরিয়তপুরের জাজিরার ভুক্তভোগী মো. রাজিব মিয়া বলেন, জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকেই মূল দলিল, পুরনো দলিলের নকলসহ সব ধরনের জমি সংক্রান্ত নথি সংগ্রহ করতে হয়। অথচ এখানে নিয়মিত ঘুস না দিলে কোনো কাজ এগোয় না।
ভাঙ্গার আব্দুল মান্নান মোল্লা অভিযোগ করেন, তিন দফা টাকা দেওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে ঘুস দেওয়ার ভিডিও করি।
অভিযোগ অস্বীকার করে মাসুদ মোল্লা বলেন, আমি টাকা নিতে চাইনি, তিনি জোর করে দিয়েছেন। সব অভিযোগ মিথ্যা।”
ফরিদপুর সদর সাব রেজিস্ট্রার মিনতী দাস জানান, ফেসবুক ও মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিওর ভিত্তিতে মাসুদ মোল্লাকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি প্রফেসর সুলতান মাহমুদ হীরক বলেন, জেলা-উপজেলার ভূমি অফিস থেকে আসা সাধারণ নাগরিক যেন দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্ত সেবা পায়, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
জেলা রেজিস্ট্রার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘুস লেনদেন ও ভুয়া কাগজপত্রের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআলো/এফএইচএস