সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
নিউজ ডেক্স: আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন ধরে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন, সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সময় গর্ভবতী নারীরা ঘরের বাইরে যেতে পারবেন না, খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন না, ফল বা শাকসবজি কাটতে পারবেন না। কারণ, এতে নাকি গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে, বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নিতে পারে কিংবা শরীরে কালো দাগ পড়তে পারে।
তবে ইসলামের দৃষ্টিতে এসব ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। কুরআন ও সহিহ হাদিসে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা নেই। নবিজি (সা.)-এর যুগে একাধিকবার সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ ঘটেছে। কিন্তু তিনি গর্ভবতী নারী কিংবা অন্য কাউকে বিশেষ কোনো কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেননি। বরং তিনি সবাইকে আল্লাহর স্মরণে, সদকা, জিকির ও নামাজে মগ্ন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
জাহেলি যুগে আরবরা বিশ্বাস করত, কোনো বিশেষ ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যুর কারণে সূর্য কিংবা চন্দ্রগ্রহণ ঘটে। এমনকি নবিজি (সা.)-এর ছেলে ইবরাহিমের মৃত্যুর দিন সূর্যগ্রহণ হলে অনেক সাহাবি মনে করেছিলেন, এটি তাঁর মৃত্যুর কারণেই হয়েছে। কিন্তু নবিজি (সা.) এই ধারণা সঙ্গে সঙ্গে খণ্ডন করেন। তিনি সাহাবিদের নিয়ে সূর্যগ্রহণের নামাজ আদায় করেন এবং বলেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন। কারো জন্ম বা মৃত্যুতে এ ঘটনা ঘটে না।
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে একবার সূর্যগ্রহণ হলে তিনি দ্রুত মসজিদে যান, সবাইকে সেখানে ডাকেন এবং দীর্ঘ সময় নামাজে দাঁড়িয়ে থাকেন। নামাজ শেষ হওয়ার পর তিনি সাহাবিদের উদ্দেশে বলেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন, এগুলো কারো জন্ম বা মৃত্যুর কারণে গ্রহণ করে না। তাই যখনই এ ধরনের ঘটনা দেখবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ করবে, নামাজ আদায় করবে এবং দোয়া করবে। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
অতএব, সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সময় নারী-পুরুষ সবারই কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকা—সদকা করা, নামাজ পড়া, জিকির করা ও ইস্তিগফার করা। এ বিষয়ে কোনো কুসংস্কারে বিশ্বাস করা ইসলামসম্মত নয়।
বিআলো/এফএইচএস