বিএনপি সমর্থক হওয়ায় হিট প্রকল্পের পরিচালক বদলি: একাডেমিক মহলে তীব্র সমালোচনা
যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে নির্বাচিত প্রার্থীকে রাজনৈতিক কারণে বাদ দেওয়ার অভিযোগ
আমরা যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই করেছি: অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ, চেয়ারম্যান ইউজিসি
রতন বালো: শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোলায়মানকে ২০২৪ সালের ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বাস্তবায়নাধীন হায়ার এডুকেশন অ্যাকসেলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তখন তিনি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
কিন্তু পরের দিন, ১৪ মার্চ, তখনকার শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল’এর মৌখিক নির্দেশে তার নিয়োগ আদেশ বাতিল করা হয়। বিএনপি সমর্থক হওয়ায় তাকে বাদ দিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রফেসর আসাদুজ্জামানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই হঠাৎ বদল ও রাজনৈতিক কারণে নিয়োগ বাতিলের ঘটনা একাডেমিক মহলে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। হাইকোর্টও প্রফেসর আসাদুজ্জামানের নিয়োগ স্থগিত করেছেন।
প্রফেসর সোলায়মান সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। তিনি আদালতকে জানান, এই সিদ্ধান্ত আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। আদালতের বেঞ্চ, বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আশিফ হাসানের সমন্বয়ে, রিট শুনানি শেষে রুল জারি করেন। আদালত প্রতিপক্ষকে চার সপ্তাহের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলেন এবং রুলের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রফেসর আসাদুজ্জামানের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।
প্রফেসর সোলায়মানের আইনজীবী, অ্যাডভোকেট মো. আবদুল্লাহ আল হাদি জানিয়েছেন, হিট প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা, উদ্ভাবন এবং আধুনিকায়ন কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে কাজ করছে। তবে রাজনৈতিক কারণে, কোনো আন্তঃকমিটি সভার সিদ্ধান্ত ছাড়াই এক দিনের ব্যবধানে প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়েছিল, যা আদালতও অবৈধ মনে করেছেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সরকারি প্রকল্প পরিচালকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে কাউকে অপসারণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা এবং প্রক্রিয়াগত শুদ্ধতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
সূত্রে জানা যায়, প্রফেসর সোলায়মান ৩২ প্রার্থীর মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। এই ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ১৩ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু একদিনের মধ্যে তা বাতিল হয়ে প্রফেসর আসাদুজ্জামানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রফেসর সোলায়মান অভিযোগ করেন, “আমার অপরাধ শুধু এই যে, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি সমর্থক। অথচ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়নি। সাধারণত এই ধরনের সিদ্ধান্তে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা বাধ্যতামূলক, কিন্তু তা মানা হয়নি। সরকারি ছুটির দিনেই তড়িঘড়ি করে প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়েছে।”
ইউজিসি ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর প্রফেসর সোলায়মানের পুনর্নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠায়। পরে ২০২৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি হিট প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ কমিটিতেও অধিকাংশ সদস্য তার পুনর্নিয়োগের পক্ষে মত দেন। তবে প্রশাসনিক কারণে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। ফলশ্রুতিতে প্রফেসর সোলায়মান হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন এবং জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, “আমরা যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই করেছি। তবে সরকারের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক কারণে হলে আমাদের আপত্তি নেই। যদি সরকার বা বিশ্বব্যাংক প্রকল্প পরিচালক বদল চায়, আমরা আপত্তি জানাইনি।”
প্রসঙ্গত, এই ঘটনায় একাডেমিক মহলে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে রাজনৈতিক প্রভাবকে প্রাধান্য দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ হলে দেশের শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বিআলো /তুরাগ