তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্যকে জাতীয় অগ্রাধিকারে আনতে হবে: উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ
নিজস্ব প্রতিবেদক: সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্যকে জনগণের হীনমন্যতার বাইরে এনে জাতীয় অগ্রাধিকারে আনতে হবে। তিনি বলেন, তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি পর্যায়ে খোলামেলা আলোচনা জরুরি।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁও সমাজসেবা অধিদপ্তরে আয়োজিত “Youth Mental Health & Suicide Prevention” বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যকে যতদিন সামাজিক ট্যাবুর বাইরে এনে সাধারণ চিকিৎসা ব্যবস্থার অংশ না করা হবে, ততদিন তরুণদের জীবন নিরাপদ হবে না। তিনি আরও বলেন, সাইবার বুলিং, অনলাইন হয়রানি, ভুয়া খবর এবং সামাজিক চাপ তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য সকলকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি তরুণদের জন্য সহজলভ্য, গোপনীয় ও সাশ্রয়ী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন। পরে নিরাপদ অ্যালায়েন্সের বোর্ড মেম্বার ড. নাজিয়া ওনি এক জরিপভিত্তিক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। সেখানে দেখা যায়, সমাজের বড় অংশের তরুণ-তরুণী মানসিক চাপে ভুগলেও সামাজিক ভয়, কুসংস্কার এবং “মানুষ কি বলবে” এই ভাবনায় তারা কাউন্সেলিং গ্রহণ করতে আগ্রহী হন না। তবে আশার বিষয় হলো, অধিকাংশ তরুণ জানিয়েছেন, যদি গোপনীয় ও সাশ্রয়ী সেবা পাওয়া যায় তবে তারা মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা নিতে আগ্রহী।
গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আবু ইউছুফ, সাবেক সচিব ড. মো. মহিউদ্দিন, যুগ্মসচিব নাজমুল হাসান, নিরাপদ অ্যালায়েন্সের পরিচালক মাসুদ মোহাম্মদসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধি ও এনজিও কর্মকর্তারা। বৈঠকে কসোভো, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া এবং সুইডেন দূতাবাসের প্রতিনিধিরা তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
এছাড়া আলোচনায় বক্তব্য রাখেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের কবিতা বোস, ইউএন উইমেনের হুমায়রা, ইউএনডিপির ফয়সাল বিন মজিদ, ইউনিসেফের ড. এলিসা ক্যাল্পনা, এমজেএফ এর তানজিন কিবরিয়া লাবণ্য, অ্যাকশনএইডের জোহরা বিনতে জামান বনী, ডব্লিউএইচও-র মানসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. এহসানুল কবির, সেভ দ্য চিলড্রেনের রুনা খন্দকার, ইউএনওপিএস এর ওবায়দুল হক এবং নিরাপদ অ্যালায়েন্সের ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিন সাদাব। তারা সবাই মানসিক স্বাস্থ্যকে জাতীয় নীতি ও উন্নয়নের সাথে যুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তরুণদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে নিরাপদ অ্যালায়েন্স দুটি বিশেষায়িত ইউনিট চালু করেছে। এর একটি হলো “প্রতিরোধ” সাইবার ইউনিট, যা অনলাইন অপরাধ ও সাইবার হুমকি মোকাবিলায় কাজ করছে। অপরটি হলো “সহযাত্রী” কাউন্সেলিং ইউনিট, যেখানে তরুণরা নিরাপদ পরিবেশে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা পাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে নিরাপদ অ্যালায়েন্সের বোর্ড মেম্বার ব্যারিস্টার তাহমিদুর রহমান বলেন, আলোচনা পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকলে এর সুফল পাওয়া যাবে না। এখন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এই উদ্যোগে সরকার, বেসরকারি খাত ও তরুণদের একসাথে কাজ করতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠক অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। আলোচকরা বিশ্বাস করেন, মানসিক স্বাস্থ্য আর অবহেলিত নয়; বরং এটি জাতীয় উন্নয়নের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার সময় এখনই।
বিআলো/তুরাগ