রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসী জীবনও ছিলো নেপালে বিক্ষোভের মূলে
আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: পুঞ্জীভূত অসন্তোষের বারুদের উপর বসে থাকা নেপালের জন্য এই স্ফুলিঙ্গটুকুই যথেষ্ট ছিল। গণবিক্ষোভের জেরে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউএমএল) এবং নেপালি কংগ্রেসের জোট সরকারের পতনের সাক্ষী রইল গোটা বিশ্ব। সামাজিক মাধ্যমের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থেকে প্রতিবাদ শুরু হলেও, এই ক্ষোভের পেছনে ছিল আরও অনেক কারণ। সূত্র: এনডিটিভি
জেন জি-এর নেতৃত্বে বিক্ষোভের মুখে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এনডিটিভি বলছে, আন্দোলন দমাতে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫১ জন নিহত ও এক হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
এই অস্থিরতার জেরে সরকারি ভবন, সিনিয়র রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত বাসভবন এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে অবস্থিত হোটেলগুলোতেও আগুন ধরিয়ে দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। নেপালের পার্লামেন্টও আগুনে পুড়েছে।
দেশটিতে এখন পর্যন্ত কার্যকর সরকার না থাকলেও, কারফিউ জারিসহ বিক্ষোভকারীদের সাথে আলোচনার মতো নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সেনাবাহিনী।
এই অস্থিরতার মূলে রয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলা অসন্তোষ। বলা হচ্ছে, সাধারণ নেপালিরা যখন বেকারত্ব, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং গভীর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছেন; তখন ‘নেপো কিডস’ হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানরা সামাজিক মাধ্যমে বিলাসবহুল গাড়ি, ডিজাইনার হ্যান্ডব্যাগ এবং বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর প্রচার চালিয়েছে।
মনে করা হচ্ছে, এসব ছবি-ভিডিও আরও বেশি ক্ষুব্ধ করেছে নানা দিক থেকে চাপে থাকা সাধারণ মানুষকে।
আর বিক্ষোভের আগে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসী জীবনযাত্রার চিত্র তুলে ধরা পোস্ট এবং ভিডিওগুলো টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স-এর মতো প্ল্যাটফর্মে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
উদাহরণস্বরূপ, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিরোধ খাতিওয়াদার কন্যা, ২৯ বছর বয়সি সাবেক মিস নেপাল, শৃঙ্খলা খাতিওয়াদাকে বিক্ষোভকারীরা অভিজাতদের বিশেষাধিকারের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।
ভাইরাল পোস্টগুলোতে শৃঙ্খলার বিদেশ ভ্রমণ এবং বিলাসবহুল জীবনযাত্রার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আর বিক্ষোভের সময় আগুন দেয়া হয়েছে তাদের বাড়িতেও। এছাড়া ইনস্টাগ্রামে ১ লাখেরও বেশি ফলোয়ার হারিয়েছেন তিনি।
জনপ্রিয় গায়িকা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার পুত্রবধূ শিবানা শ্রেষ্ঠা প্রায়শই বিলাসবহুল বাড়ি এবং ব্যয়বহুল ফ্যাশনের ভিডিও পোস্ট করেন। তিনি এবং তার স্বামী জয়বীর সিং দেউবাকে অনলাইনে ‘কোটি কোটি টাকার’ সম্পদের মালিক রাজনৈতিক পরিবারের উদাহরণ হিসেবে টার্গেট করা হয়েছিল।
এছাড়া নেপালের সাধারণ মানুষ যখন চাকরির জন্য লড়াই করছিলেন, তখন সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল (প্রচণ্ড)-এর নাতনী স্মিতা দহল সোশ্যাল মিডিয়ায় লাখ লাখ টাকার হ্যান্ডব্যাগ দেখানোর জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন।
আইনমন্ত্রী বিন্দু কুমার থাপার ছেলে সৌগত থাপাকে অনলাইনে বিলাসবহুল জিনিসপত্রে ঘেরা বিলাসবহুল জীবনযাপনকারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল। বিক্ষোভ তীব্র হওয়ার সাথে সাথে তার ছবিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
‘সাধারণ মানুষ দারিদ্র্যে মারা যাচ্ছে, আর এই নেপো বাচ্চারা লাখ লাখ টাকার পোশাক পরে’ – এমন ঘোষণা দিয়ে কাঠমান্ডু এবং তার বাইরেও এই পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে সংসদ ও মন্ত্রিসভা না থাকায় সেনাবাহিনী কাঠমাণ্ডুসহ বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করেছে। রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনারা, আর অধিকাংশ এলাকায় জারি রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
বিআলো/শিলি