রাহুল গান্ধীর নিরাপত্তা ঘিরে নতুন বিতর্ক
আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: বিদেশ সফর নিয়ে নতুন করে বিতর্কে জড়ালেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা ও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তার বিরুদ্ধে এবার সরাসরি অভিযোগ তুলেছে সিআরপিএফ। ভিভিআইপি নিরাপত্তা রক্ষা করতে গিয়ে যে সমস্ত নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক, রাহুল গান্ধী তা মানছেন না বলেই দাবি বাহিনীর। শুধু তাই নয়, বিদেশ সফরের আগে বহুবার নিরাপত্তা বাহিনীকে না জানিয়েই দেশ ছাড়ছেন তিনি—এমনটাই বলা হয়েছে সিআরপিএফের তরফে পাঠানো চিঠিতে।
সিআরপিএফ-এর ভিভিআইপি সুরক্ষা বিভাগের প্রধান সুনীল জুনে এই চিঠিটি পাঠিয়েছেন রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে। চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, একাধিক বিদেশ সফরের সময় রাহুল গান্ধী নিরাপত্তা প্রটোকল সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছেন। উদাহরণ হিসেবে চিঠিতে বলা হয়েছে— ইটালি (৩০ ডিসেম্বর – ৯ জানুয়ারি), ভিয়েতনাম (১২-১৭ মার্চ), দুবাই (১৭-২৩ এপ্রিল), কাতার (১১-১৮ জুন), লন্ডন (২৫ জুন – ৬ জুলাই), এবং মালয়েশিয়া (৪-৮ সেপ্টেম্বর) সফরের সময় নিয়ম ভাঙা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাহুল গান্ধীর জন্য বরাদ্দ রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ ‘জেড-প্লাস’ নিরাপত্তা। এতে এনএসজি কমান্ডো-সহ প্রায় ৫৫ জন নিরাপত্তাকর্মী থাকেন। এই নিরাপত্তা কাঠামো অনুযায়ী, কোনও সফরের আগে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে আগাম সতর্ক করা বাধ্যতামূলক।
নিরাপত্তা শৃঙ্খলা ভঙ্গের এমন অভিযোগ বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে এই প্রথম নয়। ২০২২ সালের ভারত জোড়ো যাত্রার সময়ও অভিযোগ উঠেছিল তিনি নিরাপত্তা বলয় ভেঙে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সেদিক থেকে দেখলে রাহুল বারবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর চোখে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর পেছনে রয়েছে আরও বড় উদ্দেশ্য। কারণ সংসদে বা রাজনীতির ময়দানে রাহুল যে ভাবে বিজেপিকে আক্রমণ করছেন, তার প্রেক্ষিতে তাকে ঘিরে এই ধরনের অভিযোগ কেন্দ্রের জন্য সুবিধাজনক।
একদিকে নিরাপত্তার কথা বলে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে, অন্যদিকে জনগণের কাছে বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে বিরোধী দলনেতা নিজেই নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এই দুই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক লাভবান হবে শাসকদল।
শুধু তাই নয়, চিঠির কপি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেকেও পাঠানো হয়েছে। তাতে কংগ্রেসকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে, বিরোধী দল এখন কেন্দ্রের নজরদারির মধ্যে।
কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, রাহুলের ভ্রমণ প্রায়শই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হয়। সেক্ষেত্রে আগাম সব তথ্য প্রকাশ করলে তার আলোচনার পরিসর ও স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে যাবে। এ কারণে এ ধরনের চাপ তৈরি করা হচ্ছে।
বিরোধীরা মনে করছেন, এটা আসলে বিরোধী কণ্ঠকে দুর্বল করার চেষ্টা। বিজেপির পক্ষে সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রাহুলকে একেবারে স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালাতে দেওয়া হচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সিআরপিএফ যেহেতু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে, তাই তাদের পক্ষ থেকে এমন চিঠি আসা নিছক নিরাপত্তা উদ্বেগ নয়, এর সঙ্গে স্পষ্ট রাজনৈতিক রঙ জড়িত। নিরাপত্তা বিধি মানা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু একজন বিরোধী দলনেতাকে লক্ষ্য করে বারবার অভিযোগ তোলা আসলে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করারই কৌশল। ফলত রাহুলের বিদেশ সফর এখন শুধুই ব্যক্তিগত নয়, বরং রাজনৈতিক লড়াইয়ের নতুন মঞ্চ।
বিআলো/শিলি