সার্বিক মূল্যস্ফীতি মোটামুটি স্থিতিশীল : অর্থ উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি মোটামুটি স্থিতিশীল, সম্প্রতি খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি কমেছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল এখন বাংলাদেশে। আমদানি শুল্ক বাড়ছে কি না- জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটা নির্ভর করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর। ঘাটতি কমানোর জন্য কী কী আমদানি করা যায়। আমরা কমফোর্টেবল পজিশনে আছি।
আমেরিকা থেকে পণ্য আনতে ভিয়েতনাম থেকে বেশি খরচ হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছুটাতো হবেই। যেমন আমরা গমের বিষয় বলেছি, এতে আমদানি মূল্যে বেশি হবে। কিন্তু মানটা অনেক ভালো। আমরা ট্যারিফ অ্যাভয়েড করতে চাচ্ছি, ঘাটতি কমাতে চাচ্ছি।
ভোক্তাদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, না, ভোক্তাদের ওপর প্রভাব পড়বে না। আমরাতো এমনিতেই ভোক্তাদের জন্য মূল্য নিয়ে অনেকটা ভর্তুকির ব্যবস্থা করেছি। টিসিবিসহ অন্যান্য বিষয়ে আমরা ভতুর্কি দিচ্ছি।
মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতিতে এখনো প্রভাব পড়েনি, আমরা যতোই আমদানি করি, সরবরাহ বাড়াই। বড় সমস্যা হলো পাইকারি ও খুচরা বাজারে। তারাতো অর্থনীতির ধারাকে ছাড়িয়ে গেছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এটা কমই হয়। আমাদের মূল্যস্ফীতি মোটামুটি স্থিতিশীল, সম্প্রতি খাদ্য বর্র্হিভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে।
সম্প্রতি অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, দেশে বেকার সংখ্যা এমন ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে যা অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মসংস্থান বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ কর্মসংস্থান হয় বেসরকারি খাতে। ব্যবসা-বাণিজ্য যদি একটু মন্থর হয়ে যায়, অবশ্যই প্রভাব পড়ে। সেটা নির্ভর করে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য কতটুকু সহায়তা দিচ্ছি। একেবারে ভয়ংকর কিছু এটা মনযোগ আকর্ষণ করার জন্য তারা বলেন। তবে আমরা সচেতন আছি। ব্যাবসা বাণিজ্য মন্থর হয়েছে কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসাটা মাঝখানে একটু মন্থর ছিল। এখন একটু ভালো হয়েছে।
ট্যাক্স প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ট্যাক্স ব্যবস্থাকে সহজ করার চেষ্টা করছি। ল’য়ারদের দায়িত্ব দিয়েছি যাতে দ্রুত কাজ সম্পন্ন হয়। অনেকেই ট্যাক্স ফরম পূরণ করতে পারেন না, তাই যদি সামান্য ফি নিয়ে এ কাজ করে দেওয়া যায় তবে সবার জন্যই সুবিধা হবে। রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্রয় কমিটিতে রাজনৈতিক কোনো বিষয় আলোচনা হয় না। তবে অর্থনীতির কিছু বিষয় অবশ্যই আলোচনা হয়। আমরা অর্থনীতির দিকটা মোটামুটি কনসোলিডেট করার চেষ্টা করছি।
এদিন অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। এর মধ্যে রয়েছে নতুন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপন, এলএনজি আমদানির উদ্যোগ এবং সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন। উপদেষ্টা বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জেনারেশন যাই হোক, ডিস্ট্রিবিউশনের সমস্যার কারণে ফল্ট তৈরি হয়। এসব সমাধানের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এমওপি ও ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।
বিবিয়ানা বিদ্যুৎকেন্দ্র মেরামত করবে সরকার : খুলনা বিভাগে বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতা বাড়াতে ৯টি নতুন জিআইএস টাইপের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ২৫৫ কোটি ৭২ লাখ ৭৮ হাজার ৮২৫ টাকা। বৈঠকে, বিদ্যুৎ বিভাগের এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘বাপবিবো’র বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (খুলনা বিভাগ) শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ নং-১১ এর আওতায় চারটি নতুন ৩৩/১১ কেভি ১*১০/১৪ এমভিএ জিআইএস টাইপ বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
উপকেন্দ্রগুলো নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে চারটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। তার মধ্যে দুটি প্রস্তাব কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশ করা রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান টিএসটিএল-ইইএল কনসোর্টিয়াম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১০৪ কোটি ৬৭ লাখ ৯৩ হাজার ৫৫০ টাকা। সুপারিশ করা দর দাপ্তরিক প্রাক্কলিত দর অপেক্ষা ৯.৪৮ শতাংশ বেশি।
বৈঠকে, বিদ্যুৎ বিভাগের আর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘বাপবিবো’র বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (খুলনা বিভাগ) শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ নং-৩ এর আওতায় ৫ টি নতুন ৩৩/১১ কেভি ২*১০/১৪ এমভিএ জিআইএস টাইপ বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
উপকেন্দ্রগুলো নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। তার মধ্যে দুটি প্রস্তাব কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশ করা রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান টিএসটিএল-ইইএল কনসোর্টিয়াম এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে। এতে ব্যয় হবে ১৫১ কোটি ৪ লাখ ৮৫ হাজার ২৭৫ টাকা। সুপারিশ করা দর দাপ্তরিক প্রাক্কলিত দর অপেক্ষা ৯ দশমিক ০৫ শতাংশ বেশি।
এদিকে বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের (এসপিএম) অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স কনট্রাক্টর নিয়োগ সংক্রান্ত দরপ্রস্তাব বাতিল করার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। বিবিয়ানা বিদ্যুৎকেন্দ্র মেরামত করবে সরকার, ব্যয় ৯০১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা : বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বাবিউবো) আওতাধীন বিবিয়ানা দক্ষিণ ৪০০ মেগাওয়ার্ট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেরামত কারার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৯০১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বেশি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিবিয়ানা দক্ষিণ ৪শ মেগা ওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির গ্যাস টারবাইন একটি অত্যাধুনিক মডেলের সিঙ্গেল স্যাপ্ট এবং সেলফ সিক্রোনাইজ সিফটিং ক্লচ সংবলিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির যন্ত্রাংশ সিমেন্স ছাড়া অন্য কেউ উৎপাদন করে না। তাছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওয়ারিন্টি পিরিয়ড শেষ হয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি না থাকায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব জনবল দ্বারা কেন্দ্রটির সিডিউল মেইন্টেন্যান্সসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে একটি দরপত্র জমা পড়ে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সুপারিশের আলোকে দরদাতা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অব সিমেন্স এনার্জি গ্লোবাল জিএমবিএইচ অ্যান্ড কে,জি, জার্মানি অ্যান্ড সিমেন্স এনার্জি বাংলাদেশের কাছ থেকে এই সেবা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে ব্যয় হবে ৯০১ কোটি ৮৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩৫৩ টাকা।
বিআলো/ইমরান