আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলা: দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাভারের আশুলিয়ায় ছয় তরুণকে গুলি করে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ মামলার আসামি সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ মোট ১৬ জন।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের বাকি দুই সদস্য হলেন– অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এদিন ট্রাইব্যুনালে শহীদ সজলের বাবা খলিলুর রহমানকে অবশিষ্ট জেরা করছেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এরপর নতুন দুজন সাক্ষ্য দেবেন বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করছেন প্রসিকিউটর সাইমুম রেজা তালুকদার।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম দিনের মতো এ মামলায় সাক্ষ্য দেন শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম ও শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান। তবে সেদিন তার জেরা শেষ হয়নি।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার সেই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরেন।
পরে সাংবাদিকদের চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার পর পুলিশের ভ্যানে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় একজন জীবিত ছিলেন। এমন বর্বরতা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। সেই ঘটনায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে বিচারকাজ চলছে।
গত ২১ আগস্ট এ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনসহ সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। ওইদিন বিচারকার্যের শুরুতেই আসামিদের অব্যাহতি চেয়ে করা আইনজীবীদের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। পরে উপস্থিত আট আসামিকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়।
ওই সময় মামলায় উপস্থিত আট আসামির সাতজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে দোষ স্বীকার করেছেন এসআই শেখ আবজালুল হক। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হতে চেয়ে মামলার ব্যাপারে যা জানেন সব আদালতের কাছে বলতে চেয়েছেন। পরে তার দোষ স্বীকারের অংশটুকু রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া রাজসাক্ষী হতে চাওয়া নিয়ে লিখিত আবেদন করতে বলা হয়। লিখিত আবেদনের পর তিনি অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হন।
এ মামলায় গ্রেফতার আসামিরা হলেন— ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ পলাতক আট আসামিকে গ্রেফতারসহ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৬ জুলাই এ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২।
প্রসিকিউশনের দাখিল করা চার্জশিটে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ছয় তরুণ নিহত হন। পরে তাদের লাশ একটি ভ্যানে তুলে নির্জন স্থানে নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। হত্যাকাণ্ডের সময় একজন আহতাবস্থায় বেঁচে ছিলেন, তাকেও জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়েছে। প্রসিকিউশন তাদের অভিযোগে ৬২ জন সাক্ষীর নাম, ৩১৩ পৃষ্ঠার তথ্য এবং ১৬৮ পৃষ্ঠার প্রমাণাদি দাখিল করেছে। সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে দুটি পেনড্রাইভও।
বিআলো/শিলি