নারায়ণগঞ্জে দুই হাজার মানুষের নিরাপত্তায় একজন পুলিশ
মনিরুল ইসলাম মনির: নারায়ণগঞ্জ জেলার জনসংখ্যা দিনদিন বাড়ছে, তবে সেই হারে পুলিশের জনবল বাড়েনি। ফলে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ জেলায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৮৬ জন। পাশাপাশি চুরি, ছিনতাই, মাদক এবং নারী নির্যাতনের মতো অপরাধও বেড়েছে। বর্তমানে জেলায় একজন পুলিশ সদস্যকে গড়ে দুই হাজারেরও বেশি মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৮৬টি। একই সময়ে চুরি হয়েছে ৯৭টি, ছিনতাই ৩৪টি, ডাকাতি ১৯টি। এ ছাড়া মাদক সংক্রান্ত ৭৬১টি মামলা এবং নারী নির্যাতন আইনে ২০৩টি মামলা হয়েছে।
২০২২ সালের সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের জনসংখ্যা ছিল ৩৯ লাখ ৯ হাজার ১৩৮ জন। বর্তমানে তা প্রায় ৪২ লাখ ছাড়িয়েছে। এ হিসাবে জেলায় প্রতি ২১৪৬ জন মানুষের জন্য একজন পুলিশ রয়েছেন। ফলে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে শহরাঞ্চল সর্বত্র কার্যকর নজরদারি রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
একের পর এক হত্যাকাণ্ডও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর ফতুল্লার ইসদাইরে কিশোর গ্যাং প্রধান ইভনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে ১৮ জানুয়ারি আড়াইহাজারে জমি বিরোধে ট্রলার চালক মিলন মিয়া নিহত হন। ৫ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে দুই যুবক নিহত হন। ৩১ মার্চ ফতুল্লায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুবক পাভেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১১ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে দুই নারী ও এক শিশুর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৪ জুন ফতুল্লায় মাদক লেনদেনের জেরে স্বপন মোল্লাকে হত্যা করা হয়। ৪ জুলাই আড়াইহাজারে ছেলের হাতুড়ি আঘাতে বাবা নিহত হন। ২৭ আগস্ট বন্দরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করা হয় মস্তকবিহীন মরদেহ।
রাজনৈতিক সংঘাতেও প্রাণহানি ঘটছে। গত ১৯ মার্চ রূপগঞ্জের চনপাড়ায় যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের সংঘর্ষে একজন নিহত হন। ১০ জুন রূপগঞ্জে ছাত্রদল নেতার গুলিতে ব্যবসায়ী মামুন হোসেন নিহত হন। একই মাসে বন্দরে বিএনপির দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে প্রাণ হারান দুজন। জুলাই মাসে আড়াইহাজারে বিএনপির অফিস ভাড়া নিয়ে বিরোধে দোকান মালিক ও মৎস্যজীবী দলের নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন নিহত হন।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জনবল সংকটই বড় বাধা। এর পাশাপাশি রয়েছে পরিবহন সংকট। গত বছরের আন্দোলনে সিদ্ধিরগঞ্জ ও আড়াইহাজার থানার একাধিক যানবাহন লুট হয় ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে জেলার জন্য অন্তত ৬টি ডাবল কেবিন পিকআপ এবং ট্রাফিক বিভাগের জন্য ২০টি মোটরসাইকেল জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী বলেছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগের পরিস্থিতি আর এখনকার বাস্তবতা এক নয়। সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক থাকলেও মানুষের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে গেছে। ফলে অপরাধ বেড়েছে, তবে পুরো জেলাকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, নারায়ণগঞ্জ জনবহুল জেলা হওয়ায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কিছুটা বেগ পোহাতে হয়। তবে যে কোনো ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাকশন নেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, জনবল ও পরিবহন সংকট থাকা সত্ত্বেও পুলিশ বাহিনী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বিআলো/তুরাগ