শিশুদের যৌন নিপীড়ন বন্ধে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করলো আইজেএম
এফ এইচ সবুজ : শিশুদের যৌন নিপীড়ন ও বাণিজ্যিক যৌন শোষণ বন্ধে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করলো ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশন (আইজেএম)। এ লক্ষ্যে সংগঠনটি বুধবার রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেল ওয়েস্টিনে একটি বিশেষ কর্মসূচির উদ্বোধন করে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলা দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে শিশু সুরক্ষা, আইন প্রয়োগ ও ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন নিয়ে নানা আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মানব পাচার মোকাবেলায় সরকারগুলোর সঙ্গে আইজেএম-এর টানা ২৮ বছরের বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে এই নতুন কর্মসূচি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন, আইজেএম-এর কর্মসূচির সারসংক্ষেপ উপস্থাপন, বিশিষ্ট অতিথিদের অংশগ্রহণে প্যানেল আলোচনা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থার প্রতিনিধিদের মধ্যে মতবিনিময়।
ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশনের (I J M) কেসওয়ার্ক ও ক্যাপাসিটি বিল্ডিং-এর ন্যাশনাল হেড মারি রিবা দৈনিক বাংলাদেশের আলো’কে বলেন—আজ আমরা একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করছি এবং আমরা আশা করছি ভবিষ্যতে বাংলাদেশে শিশুদের বাণিজ্যিক যৌন শোষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও বেশি সহযোগিতা করতে পারব। আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পুলিশ, সমাজকর্মী এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গে একসাথে কাজ করে এই ভয়াবহ সমস্যাকে প্রতিরোধ করতে চাই। প্রসিকিউশনের (আইনগত ব্যবস্থার) সঙ্গে মিলিত হয়ে ভবিষ্যতে কার্যক্রম শুরু করার আশা করছি। সরকার, স্থানীয় জনগণ এবং সামাজিক খাতের সঙ্গে অংশীদারিত্বেই আমরা এই অপরাধ দমন করতে পারব।”
আইজেএম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্লেয়ার উইলকিনসন দৈনিক বাংলাদেশের আলো’কে বলেন— আমাদের প্রাথমিক প্রকল্প শিশুদের বাণিজ্যিক যৌন শোষণ মোকাবেলায় কেন্দ্রীভূত। যেসব শিশুদের জোরপূর্বক পতিতালয়, রাস্তার যৌন কাজ বা ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে বাধ্য করা হয়—আমরা চাই তাদের মুক্ত করতে। এজন্য পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো, প্রসিকিউটরদের সঙ্গে কাজ করে কার্যকর বিচার নিশ্চিত করা এবং সামাজিক সেবা সংস্থার মাধ্যমে চিকিৎসা, কাউন্সেলিং ও পুনর্বাসন কার্যক্রম শক্তিশালী করা হবে।”
বাংলাদেশে কাজের পরিবেশ নিয়ে তিনি আরও বলেন—আমাদের অভিজ্ঞতা হলো—সব সমাজেই নারী-শিশুর নিরাপত্তা একটি অভিন্ন মূল্যবোধ। বাংলাদেশেও আমরা স্থানীয় নেতা, ধর্মীয় সম্প্রদায় ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতা আশা করছি। কেউই সহিংসতাকে ভালো কিছু মনে করে না।
পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প শেষে শিশুদের বাণিজ্যিক যৌন শোষণের হার অন্তত ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে আইজেএম। ক্লেয়ার উইলকিনসন বলেন— আমরা শুরুতে অপরাধের প্রাদুর্ভাব পরিমাপ করব এবং পাঁচ বছর পর আবার পরিমাপ করব। আমাদের পূর্ববর্তী আন্তর্জাতিক কর্মসূচিগুলোতে এ ধরনের অপরাধ ৫০ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশেও আমরা অন্তত ৫০ শতাংশ হ্রাসের লক্ষ্য স্থির করেছি।
আইজেএম-এর প্রতিনিধিদের মতে, এ কর্মসূচি শুধু শিশু সুরক্ষায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে না, বরং মানব পাচার ও যৌন শোষণ প্রতিরোধেও যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বিত পদক্ষেপ শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও তারা আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠান শেষে নারী ও শিশু পাচারবিরোধী একটি নাটিকা পরিবেশন করা হয়।
বিআলো/এফএইচএস