পালানোর সময় ‘১৭ বিয়ে’ করা সেই বন কর্মকর্তা আটক
নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘১৭ বিয়ে’র অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া বরিশাল বিভাগের সদ্য সাবেক বন কর্মকর্তা কবির হোসেন পাটোয়ারীকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় বন বিভাগের কোস্টাল সার্কেল কার্যালয়ের সামনে সরকারি কোয়ার্টার থেকে মালামাল সরানোর সময় স্থানীয়রা তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
পুলিশ জানায়, বন কর্মকর্তা কবির হোসেন পাটোয়ারীকে গতকাল সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। রাতের আঁধারে তিনি বরিশাল ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন।
খবর পেয়ে স্থানীয় ঠিকাদারসহ বেশ কয়েকজন তাকে বাধা দেয়। এ সময় সেখানে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। সেখান থেকেই তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়।
বাধাদানকারীদের অভিযোগ, বন কর্মকর্তা কবির বিভিন্ন সময় তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা ধার নিয়েছে। পাওনা পরিশোধ না করেই রাতের আঁধারে বরিশাল থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন।
অপরদিকে পুলিশ জানায়, বিশৃঙ্খলা এড়াতেই তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ সময়, বাধাদানকারীদের অভিযোগ শুনে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়।
উল্লেখ্য, বিদেশে পড়াশোনা করানো, সরকারি চাকরি দেওয়া, বিমানবালা হিসেবে চাকরি দেওয়া কিংবা সম্পত্তি দেওয়ার প্রলোভনে প্রতারণার মাধ্যমে ১৪ থেকে ১৭ নারীকে বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. কবির হোসেন পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তার বিচারের দাবিতে ভুক্তভোগী নারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ১১ সেপ্টেম্বর বরিশাল নগরীর কাশিপুর বন সংরক্ষক কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন।
এ সময় ঢাকার বাসিন্দা নাজনীন আক্তার শীলা, নারায়ণগঞ্জের সোনিয়া আক্তার, খুলনার নাসরিন আক্তার দোলনসহ একাধিক নারী তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন।
অন্যদিকে একাধিক বিয়ে কাণ্ডের ঘটনায় মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরিশালে আদালতে মামলা করেছেন এক আইনজীবী। বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট হাফিজ আহমেদ বাবলু স্ব-প্রণোদিত হয়ে মেট্রোপলিটন প্রথম আমলি আদালতে মামলাটি করেন। আদালতের বিচারক মো. সাদিক আহমেদ মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী অ্যাডভোকেট হাফিজ আহমেদ বাবলু জানিয়েছেন, বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন পাটোয়ারী চাঁদপুরের মতলব উপজেলার বাসিন্দা। তিনি এর আগে ঢাকা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত থাকাকালে ১৭টি বিয়ে ও বিয়ের নামে প্রতারণা করেছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে তিনি বিষয়টি জেনেছেন।
আইনজীবী আরও জানিয়েছেন, মো. কবির হোসেন পাটোয়ারী প্রতিটি বিয়ের বিষয়ে মুসলিম ফ্যামিলি আইনের ১৯৬১ এর ৬ ধারার বিধান লঙ্ঘন করে অধ্যাদেশ ৬(৫) এর (খ) ধারার অপরাধ সংঘটিত করেছেন।
এছাড়া প্রথম বিয়ের পর তা গোপন রেখে এক এক করে ১৭টি বিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও দেশীয় সংস্কৃতি এবং আমাদের সমাজব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে গুরুতর অপরাধ সংগঠিত করেছেন। গণমাধ্যমের খবর দেখে তিনি (আইনজীবী) স্ব-প্রণোদিত হয়ে আদালতে মামলা করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. কবির হোসেন পাটোয়ারীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ থাকায় কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রিয়াজ বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআলো/শিলি