বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ভারতে বাড়ছে
জুলাই-আগস্টে ৩১ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলার রপ্তানি হয়েছে
নানাবিধ বাধা সত্ত্বেও পণ্য রপ্তানিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ
তৈরি পোশাকশিল্পে বিশ্বে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান
নিউজ ডেস্ক: ভারতে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি। যদিও দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভারত বাণিজ্যে একের পর এক বিধিনিষেধ আর শর্ত আরোপ করে। তারপরও প্রতিবেশী দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। ভারতে চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ৩১ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলার দাঁড়িয়েছে। আর আগের অর্থবছরের একই সময়ে ওই দেশটিতে ২৮ কোটি ৫৭ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। ওই হিসাবে দুই মাসেই ২ কোটি ৫৬ লাখ মার্কিন ডলারের রপ্তানি বেড়েছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে যে সক্ষমতা বেড়েছে তারই প্রমাণএটি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নানাবিধ বাধা সত্ত্বেও পণ্য রপ্তানিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পে। বাংলাদেশ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতে ১৭৬ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি ছিল। চলমান প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তৈরি পোশাকশিল্পে বিশ্বে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। তাছাড়া এদেশে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প অনেক ডেভেলপ করেছে। যা ভারতের নেই। তাছাড়া বাংলাদেশ অনেক ক্রেতাবান্ধব। ওসব কারণে বিধিনিষেধের পরও বাংলাদেশে আসছে ক্রেতারা।
সূত্র জানায়, ভারত চলতি বছর স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ওপর বেশ কয়েকবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গত ১৭ মে তৈরি দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর ডিজিএফটি পোশাকসহ ৬ ধরনের পণ্য স্থলপথে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ২৭ জুন পাট ও পাটজাতপণ্য, ওভেন পোশাক, প্লাস্টিকসহ আরো ৯ পণ্য স্থলপথে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আর তৃতীয় ধাপে ১১ আগস্ট ভারত আরো কয়েকটি পাটজাত পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। ওই নিষেধাজ্ঞার শর্ত অনুসারে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক ও পাটপণ্য স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। শুধু সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ের নহাভা শেভা বন্দর দিয়ে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।
তাছাড়া খাদ্যপণ্য, কোমল পানীয়, কাঠের আসবাব, তুলার বর্জ্য এবং প্লাস্টিকপণ্য আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা বা মিজোরামের স্থলবন্দরের বদলে শুধু কলকাতা স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি করা যাচ্ছে। ওসব শর্ত পূরণ করেই দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে স্থলপথে ৬৬ লাখ ৬২ হাজার মার্কিন ডলারের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ৩ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলারেরছিল। তবে পাটপণ্য রপ্তানি কমার পরও তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বাড়ায় মোট রপ্তানি আয় বেড়েছে।
সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে যেসব বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানি হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের নিট ও ওভেন পোশাক, সিমেন্ট, অ্যালুমিনিয়াম স্ক্র্যাপ, স্টেইনলেস স্টিল স্ক্র্যাপ, উডেন ফার্নিচার, দরজা, জানালার ফ্রেম, টেবিল, কিচেন আসবাব, সিংক বেসিন, টেবিল ওয়্যার, কিচেন ওয়্যার, মেশিনারি পার্টস, তাজা ও হিমায়িত মাছ, শুঁটকি মাছ, পটেটো ফ্ল্যাকস, পটোটো স্টার্চ, পরিশোধিত সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, সোডিয়াম হাইড্রো অক্সাইড, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, সাবান, পলিমার ব্যাগ, স্লিপিং ব্যাগ, ইলেকট্রিক কনডাক্টর, প্লাস্টিক, টয়লেট-ফেসিয়াল টিস্যু, টাওয়েল, নেপকিন স্টক, পেপার অ্যান্ড পেপার বোর্ড, কটন ওয়েস্ট, কটন ইয়ার্ন এবং পাট ও পাটজাত পণ্য। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, মাছ ও আসবাবের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
তবে তৈরি পোশাক থেকে দেশটিতে মোট রপ্তানি আয়ের এক তৃতীয়াংশ আসে। আগে বেশির ভাগ পোশাক রপ্তানি কলকাতা স্থলবন্দর দিয়ে হতো। এখন সমুদ্রপথে রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা রয়েছে বলে ভারতের ক্রেতারা সমুদ্রপথের ব্যয় দিয়েই পণ্য নিচ্ছে। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে স্থলপথ নির্ভর পণ্য রপ্তানি কমেছে।এদিকে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের মতে, গত দুই মাসের রপ্তানি আয়ের চিত্র বেশ ইতিবাচক। যা প্রমাণ করে ভারত বাংলাদেশের জন্য একটি ভালো বাজার। সেখানে রপ্তানি আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের পণ্য দাম ও গুণমানের দিক থেকে অন্যান্য দেশের তুলনায় সক্ষমতায় এগিয়ে আছে বলেই ভারতের ক্রেতারা আসছে। এখন বিধিনিষেধের কারণে পাটপণ্যসহ যেসব পণ্য রপ্তানি কমেছে, বিধিনিষেধ তুলে নিলে রপ্তানি আয় বাড়ানোর আরো সুযোগ থাকবে। সরকারের উচিত কূটনৈতিক মাধ্যমে বিধিনিষেধগুলো প্রত্যাহারের জন্য ভারতের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করা।
বিআলো/ইমরান