রাকসু নির্বাচনে শিবির-সমর্থিত প্যানেলের ২৪ দফা ইশতেহার
নিউজ ডেস্ক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। নির্বাচনে জয়ী হলে প্রতি মাসে ২টি করে ইশতেহার বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছে তারা।আজ শনিবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন প্যানেলটির সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ।
ইশতেহারগুলো হলো- জুলাইয়ের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন, মানসম্মত খাবারের নিশ্চয়তা, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের অধিকার সংস্কার, শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্বারোপ, লাইব্রেরি ও রিডিংরুম সম্প্রসারণ ও সংস্কার, শিক্ষা কারিকুলাম আন্তর্জাতিকীকরণ, প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন, চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকীকরণ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা, নিরাপদ ক্যাম্পাস, পরিবহনব্যবস্থা সহজিকরণ, নারী শিক্ষার্থীদের অধিকার ও নিরাপত্তা, টিচার্স ইভ্যালুয়েশন, তথ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, অন-ক্যাম্পাস জব, পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি বাস্তবায়ন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার রক্ষা, সংস্কৃতির বৈচিত্রায়ন, হাইজেনিক স্যানিটাইজেশন, ক্রীড়া উন্নয়ন, সাহিত্য, প্রকাশনা ও সামাজিক সংগঠন, ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন ক্যাম্পাস এবং সবশেষ অপরাধ দমন।
সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী ফাহিম রেজা বলেন, আমরা যে-ই ইশতেহারটা দিয়েছি তার একটি চার্ট আমরা ক্যাম্পাসে টানিয়ে দেবো। প্রতি মাসে যে-ই দুইটা ইশতেহার পূরণ করা হবে, সেখানে আমরা টিক চিহ্ন দিয়ে দেবো। আমরা কথা দিয়ে কথা রাখতে চাই। উল্লেখ্য, গত ২৮ জুলাই তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী সোমবার থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে প্রচার কার্যক্রম। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গণনা শেষে সেদিনই কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ফল ঘোষণা করা হবে।
রাবিতে পোষ্যকোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে অনশনে শিক্ষার্থীরা : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্যকোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে রোদ-বৃষ্টির মধ্যেই ৯ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে করছেন। গত শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে শুরু হওয়া এই অনশন গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ৩টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত টানা প্রায় ২২ ঘণ্টা ধরে চলছিল। পোষ্যকোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত অনশন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অনশনকারীরা। প্রথমে এককভাবে অনশন শুরু করেন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুল ইসলাম।
পরে আরও আট জন শিক্ষার্থী একাত্মতা প্রকাশ করে অনশনে যোগ দেন। তারা হলেন- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সজিবুর রহমান, সমাজকর্ম বিভাগের আরিফ আলভি, আবু রাহাদ ও সৈয়দ ইস্পাহানী, ফলিত গণিত বিভাগের তৌফিকুল ইসলাম, আরবি বিভাগের রমজানুল মোবারক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নাজমুল হক আশিক এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের রেদোয়ান আহমেদ রিফাত। অনশনরত সজিবুর রহমান বলেন, আমরা দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে পোষ্যকোটা বাতিল করেছিলাম। অথচ রাকসু নির্বাচনের আমেজে সবাই ব্যস্ত থাকার সময় প্রশাসন আবারও পোষ্যকোটা পুনর্বহাল করেছে। তারা মূলত রাকসু নির্বাচনকে জিম্মি করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যদি তারা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হন, তবে তাদের পদত্যাগ করা উচিত। কাফনের কাপড় গায়ে দিয়ে অনশনে বসা আসাদুল ইসলাম বলেন, আমরা মৃত্যু পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাব। কাফনের কাপড় গায়ে দিয়ে এখানে বসেছি। এই অযৌক্তিক পোষ্যকোটা বাতিল না হলে আমরা এক ফোঁটা পানিও মুখে নেবো না। তাদের অনশন ভাঙাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক কয়েক দফায় কথা বলেছেন। তবে শিক্ষার্থীরা জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন। ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, বিষয়টি কোর্টে বিচারাধীন।
রায় না আসা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা যদি অপেক্ষা করে, তবে যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এখনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দিলে তা যেকোনো একপক্ষের দিকে চলে যাবে, যা অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে। এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভর্তি কমিটির সভায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য শর্তসাপেক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় (পোষ্যকোটা) ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি।
শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঔরসজাত/গর্ভজাত সন্তান কোটা সুবিধা পাবে; ভর্তির প্রাথমিক আবেদনের জন্য যোগ্যতা এবং শর্ত পূরণ করতে হবে; মেধার ভিত্তিতে ভর্তির জন্য নির্ধারিত আসনসংখ্যার অতিরিক্ত হিসেবে এ প্রক্রিয়ায় ভর্তির বিষয়টি বিবেচিত হবে; প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনা করে মেধা তালিকা করা হবে; সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্ধারিত শর্তাবলিসহ অবশ্যই ন্যূনতম পাস নম্বর থাকতে হবে; কোনো বিভাগে ২ জনের অধিক ভর্তির সুযোগ থাকবে না; কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানকে তার কর্মরত বিভাগে ভর্তি করানো যাবে না; ‘অটো মাইগ্রেশন’ ছাড়া শিক্ষার্থীর বিভাগ পরিবর্তনের অন্য কোনো সুযোগ থাকবে না; ভর্তির ক্ষেত্রে অনিয়ম প্রমাণিত হলে ছাত্রত্ব বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট অভিভাবকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে; সুবিধার আওতায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী কোনোভাবেই আবাসিক হলে সিটের জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবে না।
বিআলো/ইমরান