খতিয়ে দেখা হচ্ছে বিগত সরকারে নিয়োগ পাওয়া পুলিশ সদস্যের তথ্য
তথ্য গোপন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে
আন্দোলনের সময় ব্যাপক সহিংসতায় ট্রমায় পড়ে যায় ফলে পুলিশ সদস্যরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন নির্বাচন ঘিরে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বিগত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া সব পুলিশ সদস্যের তথ্য। তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে নজরের বাইরে নয় পুলিশের স্বজনরাও।ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুলিশের সব ইউনিটপ্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা পুলিশ সুপার ও থানার ওসিদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা তথ্য গোপন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না। মূলত নির্বাচন উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতি জোরালো হচ্ছে। পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করতে হবে। পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
পুলিশের জন্য ৫০০ যানবাহন ও বিপুলসংখ্যক গোলাবারুদ কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেগুলো দেশে আসবে। পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দেড় লাখ পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদের বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ইতিমধ্যে তাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি জেলার পুলিশ লাইনে ও মহানগর এলাকায় ওই প্রশিক্ষণ হবে। তাতে অতিরিক্ত আইজিপি থেকে কনস্টেবল সবার প্রশিক্ষণ হবে। প্রথমে পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হবে প্রশিক্ষক। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহেই ওই প্রশিক্ষণ শুরু হবে। আর জেলাগুলোতে ১০ সেপ্টেম্বর প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে শেষ হবে ডিসেম্বরে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদেরও পুলিশ সদর দপ্তর প্রশিক্ষক হিসেবে রাখতে চাচ্ছে। সেজন্য শিগগির নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয়া হবে।
দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছিলো পুলিশের কার্যক্রম। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর স্বাভাবিক হতে শুরু করে পরিস্থিতি। দ্রুত সময়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিএমপি কমিশনার ও র্যাব মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। পুলিশ সদস্যরাও কর্মস্থলে যোগ দেন। আন্দোলনের সময় ব্যাপক সহিংসতায় ট্রমায় পড়ে যায় ফলে পুলিশ সদস্যরা। ওই আতঙ্কএখনো কাজ করছে। যেজন্য রাতের বেলায় পালাক্রমে ও জোট বেঁধে পুলিশ রাস্তায় টহল দেয়। পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার গত এক বছরে ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নের ব্যবস্থা নিয়েছে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, পুলিশ আইন ও প্রবিধান সংশোধন, অবকাঠামো ও জনবল বৃদ্ধি, ফৌজদারি ও দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, পুলিশ মারণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না। যদিও অনেক পুলিশ সদস্যই সরকারের সিদ্ধান্ত মানতে পারছে না।
বিগত সরকারের আমলে পুলিশে ব্যাপক নিয়োগ হয়েছে। তাতে দলীয় লোকজন পুলিশে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আন্দোলনকালে ছাত্র-জনতাকে হত্যার দায়ে দুই শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পাশাপাশি ইতিমধ্যে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে শীর্ষ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন পুলিশের রাজনৈতিক কানেকশন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর গত তিনটি নির্বাচনে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের আগামী নির্বাচনে মোতায়েনের বাইরে থাকবে তারা। ভোটের মাঠে যেসব সাব-ইন্সপেক্টর ও সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর এবং কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করবে তাদের পদায়নের জন্য তালিকা করা হচ্ছে। ওই কারণে গ্রাম, থানা ও জেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কারণ আগামী নির্বাচনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিটে যে বার্তা পাঠানো হয়েছে তাতে বলা হয়, পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদের একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সেসবের মধ্যে রয়েছে বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, জন্মতারিখ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বর্তমান পদ ও কর্মস্থল, মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের নাম ও ঠিকানা, আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, রাজনৈতিক ব্যক্তির পদপদবি, আগে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল কিনা, এলাকায় কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পদে আছে কিনা, আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকে শুরু করে বর্তমানে কী ধরনের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ইত্যাদি। ওসব প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করে ইমেইলে পুলিশ সদর দপ্তর ও ইউনিটপ্রধানদের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা পেয়ে গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। সেজন্য নির্দিষ্ট ফরমে তথ্য নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আন্দোলনের সময় পুলিশের স্থাপনা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। নির্বাচনের আগেই লুট হওয়া সব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে যৌথ বাহিনী বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোটের দিন বডিওর্ন ক্যামেরা, যানবাহনের ব্যবস্থা, হ্যান্ডমাইক, অস্ত্র, যানবাহন, যোগাযোগের সরঞ্জাম এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্যামেরার সঙ্গে অত্যাধুনিক ডিভাইস সংযুক্ত করা হবে। ওই ডিভাইসে পুলিশ সদর দপ্তর, নির্বাচন কমিশন, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় মনিটরিং করতে পারবে। তাছাড়া ট্রমায় থাকা পুলিশ সদস্যদের মনোবল ফেরাতে কাউন্সেলিং করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি গুজব ও ভুয়া তথ্য রোধ করতে ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টার গঠন করবে পুলিশ সদর দপ্তর।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশ বিভাগ সব প্রস্তুতি নিয়েছে। নির্বাচনে পুলিশ সদস্যরা পুরোপুরি নিরপেক্ষ থাকবে। দ্রুতই পুলিশের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। তাছাড়া যাতে বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য নির্বাচনের আগে বড় ধরনের অভিযান শুরু হবে।
বিআলো/ইমরান