পানিতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু – বাবার আর্তনাদ: “আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে”
গাজীপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন
সাঁতার জানা ছাত্র কেন ডুবল, রহস্য ঘিরে পুলিশ তদন্ত
বন্ধুদের বক্তব্যে পরস্পরবিরোধী তথ্য, বাবার সন্দেহ উসকে দিয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: গভীর শোক আর কান্নায় ভেঙে পড়েছে একটি পরিবার। মাত্র ২২ বছরের তরুণ, স্বপ্নে ভরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, হঠাৎ করেই লাশ হয়ে ফিরলো বাড়িতে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মশহুদ মঞ্জুর বর্ষ এখন আর নেই। শনিবার বিকেলে গাজীপুরের কালীগঞ্জের পারিবারিক কবরস্থানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। এর আগে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার কলেজ গেট জামে মসজিদে।
মৃত বর্ষ এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টার দিকে সোনারগাঁও মদনপুর একটি ফার্ম হাউজের পুকুরের পানিতে ডুবে যায়। পরে তার বন্ধুরা তাকে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
বর্ষকে হাসপাতালে নিয়ে আসা বন্ধু বর্ণিল সপ্তর্ষী জানান, তাদের বাসা ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায়। তারা সকালে সাত বন্ধু-বান্ধবী মিলে তাদের সাথে থাকা এক বন্ধুর বাবার সোনারগাঁয় ফার্ম হাউজ ঘুরতে যান। দুপুর পর সেখানে একটি পুকুরে বর্ষসহ চারজন গোসল করতে নামে। এ সময় এক বন্ধু পা ফসকে পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় আরেক বন্ধু তাকে ধরতে যায়। এভাবে একজন আরেকজনকে ধরতে গেলে বর্ষ পুকুরের পানিতে তলিয়ে যায়। পরে সেখানকার আরও লোকজন এসে বর্ষকে পানি থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় আল বারাকা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে মৃত বর্ষের বাবা শেখ মঞ্জুর বারী মঞ্জু জানান, তাদের বাড়ি গাজীপুর কালীগঞ্জে। বর্তমানে মোহাম্মদপুর বাবর রোডে থাকে। তার ছেলে মশহুদ মঞ্জুর বর্ষ বিইউপির মার্কেটিং বিভাগের ২য় সেমিষ্ঠারে পড়ে। সে নিজে সাঁতার জানতো। পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার কথা না। এখানে অন্য কোনো ঘটনা থাকতে পারে বলে দাবি করেন তিনি। তার বন্ধুদের কথার মধ্যে পরাপরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায় বলেও উল্লেখ করেন।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সোনারগাঁ এলাকা থেকে বন্ধুরা ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন।
সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তদন্ত চলমান আছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না । মৃতের বাবা মঞ্জুর বারী মঞ্জু বলেন,বর্ষের বন্ধুদের মধ্যে ’তাজ’ ফার্ম হাউজের মালিকের ছেলে তাজ ,বর্নিল,কেয়ার টেকার সাইফুল ও তার স্ত্রী সান্তা বেগমসহ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে ।
বর্ষের মৃত্যু এখন কেবল একটি পরিবারের শোক নয়, এটি এক রহস্যেরও নাম। ময়নাতদন্ত রিপোর্টই হয়তো জানাবে—এটি কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি তরুণ জীবনের নির্মম হত্যাকাণ্ড।
বিআলো/তুরাগ