বরগুনায় প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হারুন মুন্সি
dailybangla
22nd Sep 2025 11:10 am | অনলাইন সংস্করণ
প্রতারণা, জালিয়াতি, প্রশ্নফাঁস ও চাঁদাবাজির একের পর এক অভিযোগ, এলাকায় স্বস্তির পাশাপাশি আতঙ্কও
বরগুনা প্রতিনিধি:
বরগুনায় একের পর এক প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন আয়লা কলেজের গ্রন্থাগারিক মোশাররফ হোসেন হারুন, যিনি এলাকায় “ভুয়া হারুন মুন্সি” নামে কুখ্যাত। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
ভুয়া তদন্ত প্রতিবেদন ও নতুন মামলা
প্রতারক হারুনের সর্বশেষ কৌশল ছিল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জাল করা। আদালতে ভুয়া তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আদালতের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী অপরাধে নতুন মামলা রুজু হয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, এ ধরনের জালিয়াতি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এর সর্বোচ্চ শাস্তি কারাদণ্ড।
প্রতারণার বহুমুখী কারবার
হারুন তার নিজ বাড়িতে “ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া অটিজম বিদ্যালয়” নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ওই বিদ্যালয়ে প্রায় ৩০ জন শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। চাকরি প্রত্যাশীরা টাকা ফেরত চাইলে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতেন। পিয়াস, সোনিয়া, শিউলি, চাঁদনী, সুখী, আলমগীর, মিরাজ, শিরিন, আফরোজা মনি, হাসি, নুসরাত, ফাতেমা সহ প্রায় ২৫-৩০ জন প্রতারিত ব্যক্তির অভিযোগ, তারা জীবনভর সঞ্চিত অর্থ দিয়ে এখন নিঃস্ব। তাদের দাবি হারুন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
অতীতের অপরাধ ইতিহাস
হারুনের বিরুদ্ধে প্রতারণার পাশাপাশি গুরুতর অপরাধেরও ইতিহাস রয়েছে। তার নামে একটি হত্যা মামলা সহ বহু মামলা বিচারাধীন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অতীতে তিনি চুরির অভিযোগে ব্যাংকের চাকরি হারিয়েছিলেন। একবার জুতা চুরির ঘটনায় গণপিটুনির শিকারও হন তিনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সামাজিক অনুষ্ঠান প্রায় সব জায়গায় তার প্রতারণার ছাপ রয়েছে। আয়লা স্কুল ও কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁস, সাংবাদিক পরিচয়ে বিভিন্ন বিয়েবাড়িতে চাঁদাবাজি, জাল সনদ ব্যবহারসহ নানা অপরাধের অভিযোগ এলাকাবাসীর মুখে মুখে ঘুরছে।
পরিবারের সক্রিয় ভূমিকা
প্রতারক হারুন আটক হলেও ভুক্তভোগীরা এখনো স্বস্তি পাচ্ছেন না। কারণ তার দুই ছেলে সাইদুর রহমান সাগর ও সৈকত মুন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা নিয়মিত ভুক্তভোগীদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন। কেউ টাকা ফেরতের দাবি তুললেই মিথ্যা মামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে ভুক্তভোগীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া
এলাকাবাসীর দাবি, বহু বছর ধরে হারুনের প্রতারণা ও জালিয়াতিতে মানুষ অতিষ্ঠ। তার গ্রেপ্তারকে স্বস্তি হিসেবে দেখলেও সবার আশঙ্কা ছেলে ও সহযোগীরা সক্রিয় থাকায় প্রতারণার ভয়াবহতা পুরোপুরি শেষ হবে না। তারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, শুধু হারুন নয়, তার পুরো চক্রকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
ভুক্তভোগীদের কান্না
প্রতারিতদের একজন আলমগীর বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল। টাকা ফেরত চাইলে আমার বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দিল। আজ আমি পথে বসে গেছি। অন্যদিকে পিয়াস নামের এক নারী ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, “আমার স্বামী-সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে টাকা দিয়েছিলাম। এখন না পাচ্ছি চাকরি, না পাচ্ছি টাকা। বরং প্রতিদিন নতুন নতুন হুমকি পাচ্ছি।”
প্রশাসনের প্রতি দাবি
স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসন যদি কঠোর ব্যবস্থা নেয়, তবে প্রতারক হারুনের চক্র ভেঙে মানুষ শান্তি পাবে। তারা হারুন ও তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
বিআলো/ইমরান