অসংক্রামক রোগে মৃত্যু বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে
নিউজ ডেস্ক: সংক্রামক রোগ দেশে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও অসংক্রামক রোগে বেশি মৃত্যু হার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ অসংক্রামক ব্যাধি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। অনেক রোগীইই চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারে না। আবার চিকিৎসা খরচের জোগান দিতে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। রোগীর পরিবারও আর্থিক সংকটে পড়ে যায়। তাছাড়া অর্থের অভাবে অনেকে চিকিৎসা বন্ধ করে নিজের ভাগ্য ছেড়ে দেয় আল্লাহর ওপর। দেশে যে হারে অসংক্রামক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে হাসপাতালের পর হাসপাতাল তৈরি করেও এতো বেশি সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
দেশে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত ব্যাপক হারে মানুষ হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, বিভিন্ন রকম ক্যানসারসহ নানা ধরনের অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৭০ শতাংশই অসংক্রামক রোগে মারা যায়। আর অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর ৮০ ভাগই স্ট্রোকের কারণে হচ্ছে। মূলত অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন, বায়ুদূষণ, মিষ্টি জাতীয় (চিনি) খাবার ও লবণ বেশি খাওয়া; দূষিত, পচা ও বাসি খাবার খাওয়া, পানে জর্দা খাওয়া, গুল ব্যবহার, ব্যাপক হারে ধূমপান করা, সুপেয় পানির অভাব, কায়িক পরিশ্রম না করা ইত্যাদি কারণে মানুষ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাছাড়া হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম না করা, নানা কারণে বিষণ্নতায় ভোগাসহ আরো কিছু কারণও রয়েছে। ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা বেশির ভাগ লোকই জানে না।
তাছাড়া নীরবে আরো বিভিন্ন রোগ হচ্ছে। ওসব রোগ সম্পর্কে লোকজনের কোনো ধারণা নেই। অথচ ব্লাড সুগার, ইউরিন পরীক্ষা এবং ব্লাড প্রেসার মেপে অসংক্রামক রোগের প্রাথমিক অবস্থা নির্ণয় করা সম্ভব। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষেরই স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা নেই। দেশের হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ২ হাজার ৬০০ বেডের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ৪ সহস্রাধিক রোগী থাকে। আর ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৯০ ভাগ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। সীমিত জনবল দিয়ে এতো বিপুলসংখ্যক রোগীকে ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউটেও প্রতিদিন স্ট্রোকের রোগী বাড়ছে। তাছাড়াও নানা নিউরোলজিক্যাল রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলছে।
দেশে শুধু স্ট্রোকে মৃত্যুর হার ৮০ শতাংশ। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সের লোকই স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। এটা একটা অশনিসংকেত। তাছাড়া পিত্তনালি, কোলন ও লিভার ক্যানসারের রোগী বাড়ছে। মূলত অসংক্রামক রোগের কারণেই অকালমৃত্যুর হার বেড়ে চলছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রতিরোধ কার্যক্রম দেশব্যাপী ব্যাপক হারে বাস্তবায়ন শুরু করলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি অন্যান্য মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনসহ সবাইকে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ জরুরি।
পাশাপাশি অসংক্রামক রোগ ব্যাপক হারে বৃদ্ধির কারণ, প্রতিকারের উপায় এবং স্বাস্থ্যসচেতনতার বিষয়টি পৌঁছে দিতে হবে ঘরে ঘরে। রোগ সম্পর্কে জানা থাকলে কিংবা একটু সচেতন হলে অসংক্রামক রোগ রোধ করা সম্ভব। বর্তমানে বায়ুদূষণ, পরিবেশ ও খাদ্যাভ্যাস, ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যের কারণে শিশুরা মায়ের গর্ভ থেকেই জটিল রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। তাতে অকালে শিশুমৃত্যুর হারও বেড়ে চলছে। আগে ১০ গ্রামে একজন ক্যানসার রোগী ছিল না। এখন অনেক বাড়িতেই ক্যানসার রোগী পাওয়া যাবে। তাছাড়া কিডনি, হৃদরোগ, স্ট্রোক, লিভারের রোগসহ নানা ধরনের অসংক্রামক রোগে মানুষ আক্রান্ত। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য দেশে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা জরুরি।
এদিকে এ প্রসঙ্গে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, ভেজাল খাদ্য, পরিবেশ, ফাস্ট ফুডসহ নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য খাওয়ার কারণে অসংক্রামক ব্যাধিতে শিশু থেকে সব বয়সের মানুষ ব্যাপক হারে আক্রান্ত হচ্ছে। কিডনি, লিভার, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, স্ট্রোক, হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকসহ মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। অথচ শুধু স্বাস্থ্যসচেতন হলেই ওসব রোগ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বিআলো/ইমরান