দেশি-বিদেশি পর্যটক টানতে চাই অবকাঠামো উন্নয়ন ও শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং: সাকিফ শামীম
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বাংলাদেশে রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, পাহাড়পুরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, সিলেটের চা-বাগান ও পাহাড়ি অঞ্চলের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এ সবকিছুই বিশ্ব পর্যটনের মানচিত্রে উজ্জ্বলভাবে জায়গা করে নেওয়ার মতো সম্পদ। কিন্তু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও কার্যকর ব্র্যান্ডিং না থাকায় পর্যটন শিল্প প্রত্যাশিত গতিতে এগোতে পারছে না।
জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (UNWTO) তথ্য অনুযায়ী, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আন্তর্জাতিক পর্যটন রাজস্ব দ্রুত বাড়ছে। অথচ বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান এখনো ২ শতাংশের আশেপাশে স্থির হয়ে আছে।
ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ল্যাবএইড গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিফ শামীম বলেন, ‘পর্যটন শিল্পকে জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি করতে হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য সামগ্রিক উন্নয়ন এবং শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং অপরিহার্য। এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি বাড়বে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে মূলত চারটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে- ১. দুর্বল ভৌত ও ডিজিটাল অবকাঠামো। ২. নিরাপত্তা ও মানসম্পন্ন সেবার অভাব। ৩. অকার্যকর ব্র্যান্ডিং ও দুর্বল মার্কেটিং। ৪. আন্তর্জাতিক মানের বিনোদন ও কেনাকাটা সুবিধার ঘাটতি।
পর্যটন এলাকায় মানসম্মত রাস্তা, বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ এখনো অপ্রতুল। অনেক জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল, যার প্রভাব পড়ছে ডিজিটাল মার্কেটিং ও অনলাইন পর্যটন সেবায়। আবার আন্তর্জাতিক মানের হোটেল-মোটেল স্বল্পসংখ্যক এবং যেগুলো আছে, সেগুলো তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোকে স্মার্ট ট্যুরিজম জোন ঘোষণা করে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। পর্যটন পুলিশের পাশাপাশি প্রশিক্ষিত গাইড সার্ভিস চালু করা, আতিথেয়তা খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা জরুরি।
এ ছাড়া ডেটাভিত্তিক প্রচারণা, আন্তর্জাতিক ভ্রমণ মেলায় অংশগ্রহণ, গুগল-ফেসবুক-ইউটিউবে লক্ষ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপন বাড়ানো প্রয়োজন। পর্যটকদের জন্য নির্ভরযোগ্য যোগাযোগব্যবস্থা, বিশ্বমানের বিনোদনকেন্দ্র ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগও নিশ্চিত করতে হবে।
সাকিফ শামীম বলেন, ‘পর্যটন শুধু অর্থনৈতিক খাত নয়, এটি দেশের পরিচিতি ও সফট পাওয়ার বৃদ্ধির অন্যতম হাতিয়ার। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ, স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশকে বিশ্বমানের পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করা সম্ভব।’
বিআলো/এফএইচএস