নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দশ সিইসির
নিজস্ব প্রতিবেদক: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো অন্যায় নির্দেশনা দেবেন না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। আজ শনিবার নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় কোনো দলের পক্ষে কাজ না করতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দশ দেন তিনি।
সিইসি বলেন, আমি পরিবারের প্রধানের জায়গায় থেকে দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করি। বাংলাদেশের মতো জায়গায় কাজ করা খুব কঠিন। আমরা অনেক দেখা-অদেখা, বহু চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছি। অনেকগুলো দেখা যায়। অনেকগুলো দেখ যায় না। আমি পজিটিভ মানুষ। অর্ধেক খালি গ্লাসকে আমি সব সময় অর্ধেক ভরা দেখি। তিনি বলেন, আমাদের ওপর আস্থা আছে বলেই প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলছেন- ঐতিহাসিক নির্বাচন করবো। আমরা অনুরাগ, বিরাগের বশবর্তী না হয়ে, আইন মেনে কাজ করবো। আমরা অন্যায় নির্দেশনা দেবো না। বেআইনি নির্দেশনা, কারও পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেবো না। সঠিক কাজটি, সঠিকভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেবো।
নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য এ সময় তিনি কর্মকর্তাদের হাত তুলে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে শপথ করতে বলেন। কর্মকর্তারা হাত তুলে সে শপথ করেন। সিইসি বলেন, আপনারা কারও পক্ষে কাজ করবেন না। কোনো দলের পক্ষে কাজ করবেন না। একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষভাবে, বিশেষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই কাজ করতে হবে। আমাদের শপথ রক্ষা হবে আপনাদের ভূমিকার ওপর। বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন। এ সময় নির্বাচন কমিশন সচিব ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মনির হোসেন এ সময় প্রবাসে দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার কার্যক্রমে ইসি কর্মকর্তাদের নিয়োগের দাবি জানান।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে অপপ্রচার রোধে মাঠ পর্যায়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়ার গুরুত্বও তুলে ধরেন তিনি। মনির হোসেন বলেন, এআই নির্ভর মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন বা ম্যালইনফরশেন সাধারণ একটি নির্দিষ্ট এইজ গ্রুপ জড়িত থাকে। বিশেষ করে স্কুলে, কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাই তাদের নিয়ে আমরা ওয়ার্কশপ করতে পারি। প্রশাসনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পদের আপগ্রেডেশন প্রয়োজন। কেননা, একজন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদ যদি অন্যান্য দপ্তরের চেয়ে পদমর্যাদায় কম হয় তাহলে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনারদের পদ মর্যাদা আরও উন্নীত করা প্রয়োজন। এতে মন্ত্রী পর্যায়ের সঙ্গে ইসির যোগাযোগ সহজ হবে। নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার পদে ইসি কর্মকর্তাদের নিয়োগ এবং আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিলে আচরণবিধি প্রতিপালন আরও সহজ হবে। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আশফাকুর রহমান বলেন, কমিশন যদি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ায় আমরা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও মেরুদণ্ড সোজা হয়ে দাঁড়াবো। আমাদের সংকট আস্থার সংকট। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে হারানো আস্থাকে পুনরুদ্ধার করতে চাই। গত তিনটি নির্বাচনের মতো নির্বাচন করতে চাই না।
ভোটের নামে প্রহসনের কারণেইজুলাই অভ্যুত্থান হয়েছে: নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছে পঁচা নির্বাচনের জন্য। এর একটাই কারণ- নির্বাচনের নামে প্রহসন। গতকাল শনিবার নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সম্মেলনে তিনি বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, জুলাই হয়েছে পঁচা নির্বাচনের জন্য। এর একটাই কারণ নির্বাচনের নামে প্রহসন। আমরা পক্ষপাতমূলক, দুষ্টু নির্বাচনের নির্দেশনা দেবো না। আপনারাও (কর্মকর্তা) করবেন না।
করলে দায় আপনাদের নিতে হবে। আইন অনুযায়ী সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, ভোটার তালিকা প্রণয়নে সচেতনতা কার্যক্রম হাতে নেওয়ার পরেও নারী ভোটার পুরুষের তুলনায় কম। নারীরা বিয়ের আগে হতে চান না, ধর্মীয় কারণে ভোটার হতে চান না, নানা কারণে হতে চান না। এগুলো নিয়ে সামনে আমাদের আরও সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে। এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, মৃত ভোটার কর্তনের ক্ষেত্রে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেবল কাজ করলে হবে না। স্থানীয় সরকারসহ সরকারের অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
যারা বাদ পড়েছে, তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। বিদেশি নাগরিক আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, র্যান্ডম স্যাম্পলিং করছি। মাঠ কর্মকর্তাদেরও করতে হবে। রংপুর, নীলফামারী এসব এলাকায় বিদেশি নাগরিক পাওয়া যাচ্ছে। আবুল ফজল বলেন, এনআইডি নিয়ে মানুষের মাঝে অস্বচ্ছ ধারণা আছে। অনেকেই ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য নতুন এনআইডি করতে চান।
তাই এসব নিয়ে কাজ করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে এনআইডি সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। এই ভোগান্তির কারণে দালালরা সুযোগ নিচ্ছে। এনআইডি সংক্রান্ত ভোগান্তি, সুপরিকল্পিত ভোগান্তি সৃষ্টি করলে তিনি যেই হোন না কেন মেনে নেওয়া হবে না। তিনি বলেন, প্রবাস ভ্রমণের জন্য শুধুমাত্র প্রবাসে ভোটার কার্যক্রম চালাতে যাওয়ার দরকার নেই। তাই কর্মকর্তার সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছি। ভোটে খরচ তিন হাজার কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাই আমাদের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে হবে। তবে তার অর্থ এই নয় যে, যেখানে ব্যয় করতে হবে, সেখানে করবো না। এ সময় তিনি নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) থেকে যেন অনার্স, মাস্টার্স, রিসার্চ প্রোগ্রাম হয়, সেটা করতে হবে। নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত কর্মকর্তাদের সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিআলো/ইমরান