জন্মগত হৃদরোগ ‘মহামারী’ পর্যায়ে: বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে শিশুদের জন্মগত হৃদরোগ এখন শিশুস্বাস্থ্যের বড় হুমকি হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তাদের মতে, এ রোগের প্রকোপ এখন ‘মহামারী’ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন প্রায় ৮ হাজার শিশুর জন্ম হয়। এর মধ্যে অন্তত ২০০ শিশু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্মায়। অর্থাৎ বছরে এই সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৭৪ হাজার।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ‘ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা। শিশু হৃদরোগ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে যৌথভাবে এ আয়োজন করে কিডস হার্ট ফাউন্ডেশন, চাইল্ড হার্ট ট্রাস্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হার্ট রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব এডাল্ট অ্যান্ড কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন হৃদরোগ সার্জন অধ্যাপক এস আর খান। সভাপতিত্ব করেন কিডস হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নূরুন্নাহার ফাতেমা।
ডা. নূরুন্নাহার ফাতেমা বলেন, “প্রতিদিন প্রায় দুই শতাধিক শিশু হৃদরোগ নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। এটি ডেঙ্গু বা কোভিডের মতোই এক ধরনের মহামারী হলেও জাতীয় স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে এখনও অন্তর্ভুক্ত হয়নি।” তিনি প্রতিটি নবজাতককে জন্মের পর প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের আওতায় আনার ওপর জোর দেন।
তিনি আরও জানান, ২০১৩ সালে দেশে মাত্র ১২–১৬ জন পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক বিশেষজ্ঞ ও ৬–৮ জন কার্ডিয়াক সার্জন ছিলেন। কিন্তু এখনো কাঠামোগত দুর্বলতা ও বিশেষজ্ঞ ঘাটতি বিদ্যমান।
অধ্যাপক এস আর খান বলেন, কিছু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ হতে পারে, যা মাত্র ২০ পয়সার একটি ওষুধ দিয়েই প্রতিরোধ করা সম্ভব। অথচ একটি হার্ট ভালভ প্রতিস্থাপনে খরচ হয় প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। “প্রতিরোধই সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী সমাধান,” যোগ করেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বিবাহ, চিকিৎসাবিহীন ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভাবস্থায় কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি এবং ভাইরাসজনিত রোগ শিশুদের জন্মগত হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ সাফি মজুমদার, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের অধ্যাপক শাহিদুল ইসলাম, বিএমইউর অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম, সিএমএইচের অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম ভূঁইয়া, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের রেজওয়ানা রিমা ও পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট ডা. আবদুস সালাম।
বিআলো/এফএইচএস