বেসরকারি মেডিকেল কলেজ আগ্রহী হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা
নিউজ ডেস্ক: বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়তে আগ্রহী হচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। ফলে ওসব প্রতিষ্ঠান আশানুরূপ শিক্ষার্থী না পাওয়ায় অর্ধেকেরও বেশি আসন ফাঁকা থাকছে। মূলত বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে পিছিয়ে থাকার কারণেই অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ওসব প্রতিষ্ঠানে আগ্রহী হচ্ছে না। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় চলতি বছর ১ লাখ ৩১ হাজার জন অংশ নেন। তার মধ্যে ৬০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পাস করেছে। সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শেষে বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি শুরু হয়। সেখানে আসন সংখ্যা ৬ হাজার ২৯৩টি। সরকারি মেডিকেল কলেজের মতো করেই বেসরকারিতেও অটোমেশন পদ্ধতিতে ভর্তি চলে। শিক্ষার্থীরা তাদের মেধাক্রম অনুযায়ী কলেজ বাছাইয়ের সুযোগ পায়। তাতে ৬৭টি মেডিকেল কলেজে ৫ হাজার ৮৫৬ জন ভর্তি হয়েছে। ফাঁকা রয়েছে ৪৩৭টি আসন। অটোমেশন চালু হওয়ার আগে কলেজের হাতে শিক্ষার্থী ভর্তির কর্তৃত্ব ছিল। কিন্তু এখন তা স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় স্বচ্ছতা ও মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তির হার বেড়েছে। কিš ‘পিছিয়ে থাকা মেডিকেল কলেজগুলো তাতে অসুবিধায় পড়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর ভূইয়া মেডিকেল কলেজে চলতি বছর শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্ধারিত আসন ছিল ৫৭টি। কিন্তু ওই ৫৭ আসনের বিপরীতে মাত্র ১৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। ওই রকম আরো ১৩টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে প্রায় অর্ধেক আসন ফাঁকা রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো কিশোরগঞ্জের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ, বিক্রমপুর ভূইয়া মেডিকেল কলেজ, সিটি মেডিকেল কলেজ, প্রাইম মেডিকেল কলেজ, মার্কস মেডিকেল কলেজ, পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ, আশিয়ান মেডিকেল কলেজ, সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ, আহ্ছানিয়া মিশন মেডিকেল কলেজ, সাউথ অ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ, মনোয়ারা সিকদার মেডিকেল কলেজ এবং আদ-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার মানোন্নয়নে মনিটরিং বাড়ানো জরুরি। তা নাহলে ওসব প্রতিষ্ঠান থেকে হাতুড়ে ডাক্তার বেরুবে। যা দেশের স্বাস্থ্যখাতের জন্য বুমেরাং হওয়ার শঙ্কা থাকে। বর্তমানে যে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল রয়েছে তার কাজ হবে বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে জানানো। তারা সমস্যাগুলো শনাক্ত করে মেডিকেল কলেজ কিংবা স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্তৃপক্ষকে জানাবে এবং দ্রুত সেগুলো সমাধান করতে হবে। কারণ মেডিকেল শিক্ষায় গাফিলতি হলে দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এদিকে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা অর্থ খরচ করে পড়াশোনা করে। স্বাভাবিকভাবেই তারা একটা মানসম্পন্ন মেডিকেল কলেজে শিক্ষা লাভ করতে চাইবেন। সেক্ষেত্রে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানসম্পন্ন নয়, সেগুলোর চাহিদা দিনে দিনে কমে আসবে। স্বাভাবিকভাবেই যারা মান নিশ্চিত করতে পারবে না, শিক্ষার্থীর অভাবে একসময় বন্ধ হয়ে যাবে।
অন্যদিকে এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষার্থী না পাওয়াতেই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের ব্যর্থতার বিষয়টি বোঝা যায়। সেজন্যই অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের কাছে সেগুলো পছন্দের কলেজ হয়ে উঠতে পারছে না। মূলত পিছিয়ে থাকার কারণেই ওই মেডিকেল কলেজগুলো শিক্ষার্থী পাচ্ছে না।
বিআলো/ইমরান