যুদ্ধবিরতি শেষ হতেই পাকিস্তানের বিমান হামলা, কান্দাহারে নিহত ৪০
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তান- পাকিস্তান সীমান্ত আবারও রক্তাক্ত হলো। কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বোলদাক শহরে পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর চালানো এক বিধ্বংসী হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত ও ১৭০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন নারী, শিশু ও আফগানিস্তানের তিন ক্রিকেটার। হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) গভীর রাতে আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশের সীমান্তবর্তী শহর স্পিন বোলদাকে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তানের বিমান বাহিনী।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ জানায়, হামলাটি সরাসরি বেসামরিক আবাসিক এলাকায় পরিচালিত হয়।
স্পিন বোলদাকের জনস্বাস্থ্য প্রধান করিমুল্লাহ জুবাইর আঘা বলেন, “নিহতদের সবাই বেসামরিক, অনেকেই নারী ও শিশু। আহতদের মধ্যে বহুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, ফলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।”
হামলার সময় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয়েছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে। ১১ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সংঘাত ও গোলাগুলির পর ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ১৫ অক্টোবর থেকে। সেই বিরতি শেষ হওয়ার পরপরই পাকিস্তানের এই হামলা- যা অনেকের মতে ‘পরিকল্পিত আগ্রাসন’।
প্রত্যক্ষদর্শী হাজী বাহরাম বলেন, “আমি জীবনে এমন অবিচার দেখিনি। যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে, তারা আমাদের নারী ও শিশুদের ওপর বোমা ফেলেছে।”
অন্য এক আহত ব্যক্তি নুরগালি জানান, “এখানে কোনো সামরিক ঘাঁটি ছিল না, ছিল শুধু বাজার ও সাধারণ মানুষ।”
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলা হয়, বিমান হামলার পাশাপাশি সীমান্ত পেরিয়ে আর্টিলারি গোলাবর্ষণও হয়, যা নক্লি, হাজী হাসান কেলয়, ওয়ারদাক, কুচিয়ান, শোরাবাক ও শহীদসহ একাধিক বেসামরিক এলাকায় আঘাত হানে। এতে বহু বাড়িঘর ধ্বংস ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
তিন ক্রিকেটারের মৃত্যু, সিরিজ বাতিল-
হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আফগানিস্তানের তিন ক্রিকেটার- কবির, সিবগাতুল্লাহ ও হারুন। তারা পাকতিকা প্রদেশের উরগুন জেলার বাসিন্দা ছিলেন। স্থানীয় একটি প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেরার পথে হামলায় প্রাণ হারান তারা।
এই ঘটনার পর আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসি-বি) পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আসন্ন ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে।
বোর্ড এক বিবৃতিতে হামলাকে “মানবতাবিরোধী ও কাপুরুষোচিত” বলে আখ্যা দিয়ে জানায়, “আমাদের খেলোয়াড় ও জনগণের ওপর এই আক্রমণ অমানবিক। নিহতদের স্মরণে এবং প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবেই আমরা সিরিজ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।”
নিহতদের মরদেহ স্পিন বোলদাকের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। শত শত স্থানীয় বাসিন্দা জানাজায় অংশ নেন।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, পরিস্থিতি আপাতত শান্ত হলেও সীমান্ত জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। উভয় দেশই সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে।
আন্তর্জাতিক মহল এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং অবিলম্বে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে দুই দেশের সম্পর্ক যে নতুন এক সংকটময় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে- তা এখন স্পষ্ট।
বিআলো/শিলি



