কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘হুক্কা’
নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে এক সময়ের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য হুক্কা বা ঢাবা ব্যাপক পরিচিতি ছিল। কালের আবর্তে প্রায় হারিয়ে গেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘হুক্কা’। বহু যুগ আগে থেকেই জনপ্রিয় ধুমপানের একমাত্র মাধ্যম ছিল হুক্কা। তবে এখনো নবীনগরে দু’একটি গ্রামে দেখা মেলে হুক্কার।
প্রবীণ মানুষেরা হুক্কার মধ্যে খুঁজে পান ইতিহাস ঐতিহ্য আর মাটির গন্ধ। সে সময় গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রাচীন নিদর্শন ছিলো হুক্কা। দিনমজুর থেকে শুরু করে জমিদার বাড়িতে পর্যন্ত হুক্কার প্রচলন ছিল সর্বত্রই। বাহারি ধরনের হুক্কা তৈরি হতো নারকেলের আইড়চা দিয়ে। তার সঙ্গে সাবধানে লাগানো হতো কারুকার্য করা কাঠের নল আর তার ওপর মাটির কলকিতে টিক্কা দিয়ে তামাক সাজানো হতো।
নারিকেলের আইড়চা ভর্তি থাকতো পানি দিয়ে। আগের দিনে মহিলা/পুরুষ নির্বিশেষে সবাই হুক্কা দিয়ে ধুমপান করত। শীতের সকালে মহাজন বাড়ির কাচারি থেকে শুরু করে জমিদার বাড়ির কাচারি পর্যন্ত হুক্কার বিচরণ ছিল। পালাবদল করে হুক্কা খাওয়া চলতো সবার মাঝে। জমিদার বাড়ি এবং স্ব”ছল পরিবার গুলোতে হুক্কা ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। সে সব হুক্কায় থাকতো লম্বা পাইপ আর সেই লম্বা পাইপের মাথায় থাকা হুক্কায় তামাক থাকতো। নলটি মুখে দিয়ে আয়েশ করে হুক্কা টানত মহাজনরা।
জানা যায়, হুক্কার উপকারিতা ও ছিল অনেক। পেটের পীড়া, শরীরের আঘাতসহ নানাবিধ রোগে হুক্কার পানি ছিল মহৌষধ, গরুর ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা ও করা হতো এ পানি দিয়ে। এখন হুক্কার স্থানে দখল করে নিয়েছে বিড়ি / সিগারেট।
আধুনিক যুগের ছেলে-মেয়ে হুক্কা দেখেনি, তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পরিচয়ের জন্য হুক্কা সংরক্ষণ খুবই জরুরী। নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিশেষ করে নারায়ণপুর ,শ্রীঘর ও বড়িকান্দি গ্রামে প্রচুর হুক্কা তৈরী হত।
গোপিনাথ সুরের স্থানীয় বাসিন্দা হাবিব রহমান বলেন, হুক্কায় ক্ষতি নেই এমন কথা বলবো না, তবে আধুনিকতার নামে যে সব মরণ নেশা আমাদের চারপাশে যুব সমাজকে গিলে খাচ্ছে সে তুলনায় হুক্কা অনেক ভাল। অন্তত সর্বগ্রাসী নেশার কারণে সমাজের এত অবক্ষয় হতো না। অতীতে হুক্কা ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল, কিন্তু কালের বিবর্তন আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় সহজলভ্য বিভিন্ন নেশা জাতীয় দ্রব্য হাতের নাগালে থাকায় এর প্রচলন আস্তে আস্তে বিলুপ্ত প্রায়।
তিনি আরো বলেন, চোখে পড়ে না আর সেই হুক্কা টানার মজার দৃশ্য। গ্রামের কৃষক যখন মাঠে কাজ করতে করতে ক্লান্তি বোধ করত তখন হুক্কার কলকিতে টিক্কার আগুন ধরিয়ে বসে ধুমপান করত। টিক্কাতে আগুন ধরানোর জন্য দিনমজুররা খর দিয়ে বেনা বানিয়ে নিত। আজ সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না, আস্তে আস্তে হুক্কা টানার গুরগুর শব্দের প্রচলন প্রায় শেষ।
লেখক- রাসেল আহমেদ
বিআলো/এফএইচএস



