ইসরাইলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর বর্বর নির্যাতন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ইসরাইল সম্প্রতি প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। তবে মুক্তিপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন, কারাগারে তাদের ওপর যে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতার মতো।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইল আক্রমণের পর শুরু হওয়া যুদ্ধে ইসরাইলি সেনাবাহিনী হাজার হাজার গাজাবাসীকে আটক করে। ২০০২ সালের ‘অবৈধ যোদ্ধা আটক আইন’ অনুযায়ী সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত তাদের বিভিন্ন কারাগারে পাঠায়। হাসপাতাল, স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র— এমনকি রাস্তায় চেকপয়েন্ট থেকেও সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে আটক করা হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা হামোকেদ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের অক্টোবরের শুরুতে প্রায় ২,৬৭৩ গাজাবাসী ‘অবৈধ যোদ্ধা আইন’-এর আওতায় আটক ছিলেন। অধিকাংশই জানতেন না কেন তাদের আটক করা হয়েছে। শুনানিগুলো মাত্র কয়েক মিনিটের ভিডিও কনফারেন্সে শেষ হয়। আইনজীবী নিয়োগ, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের সাক্ষাতের সুযোগও পাওয়া যায়নি।
মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিরা জানিয়েছেন, কারাগারে তারা ভয়ঙ্কর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। একজন ট্রাকচালক বলছেন, তাকে ‘ডিস্কো রুম’-এ ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রচণ্ড শব্দে গান শুনানো হতো এবং ঘুমের সুযোগ দেওয়া হতো না। আরেক বন্দি জানিয়েছে, ৯৬ দিন চোখ বাঁধা ও হাতকড়া পরা অবস্থায় আটক রাখা হয়েছিল। এমনকি ঘুমানো বা বাথরুমে যাওয়ার সময়ও হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়নি। হামোকেদ অন্তত ১২ জন বন্দির কাছ থেকে একই ধরনের নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে।
ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির স্বীকার করেছেন, ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর কঠোর নীতিমালা প্রয়োগ করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এক সেনাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় মারধরের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই বিচারহীন ও অমানবিক বন্দিত্ব আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন। গাজার সাধারণ মানুষদের জন্য এই ঘটনা দীর্ঘদিনের আঘাত হিসেবে থেকে যাবে।
বিআলো/শিলি



