অস্ট্রেলিয়ায় বরেণ্য সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার ফজলুল হক স্মরণে আলোচনা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী
সালাম মাহমুদ: অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে টেলিভিশন রিপোর্টার্স ইউনিটি অব বাংলাদেশ (ট্রাব) অস্ট্রেলিয়া শাখার উদ্যোগে প্রয়াত বরেণ্য সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার ফজলুল হকের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে স্মরণসভা, আলোচনা, দোয়া মাহফিল ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
আগামী ২৬ অক্টোবর বিকেলে ফজলুল হকের জীবনী পাঠের মাধ্যমে এ স্মরণ আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে। ট্রাব অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ও ভয়েস অব সিডনি সম্পাদক প্রকৌশলী অর্ক হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী বরেণ্য সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও ট্রাব নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অতিথি বক্তা হিসেবে যুক্ত হবেন ট্রাব ইন্ডিয়া শাখার সভাপতি ও ফজলুল হক রিসার্চ সেন্টারের প্রস্তাবিত চেয়ারম্যান ড. নটরাজ রায়, ট্রাব ইউরোপ শাখার সভাপতি মো. আবু তাহির, ট্রাব যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনি এবং ট্রাব নেপাল শাখার সভাপতি সানজানা শর্মা। এছাড়া আলোচনায় যোগ দেবেন ট্রাব কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও দৈনিক গণকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক সালাম মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র আলোকচিত্র সাংবাদিক এস এম নাসির এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক আমার বার্তার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট হাফিজ রহমান।
প্রয়াত ফজলুল হক (মনি চৌধুরী) ছিলেন সাংবাদিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিশুচলচ্চিত্রের একজন পথিকৃৎ। প্রাচীন সমৃদ্ধ জনপদ পুণ্ড্রদেশ বা বর্তমান উত্তরবঙ্গে জন্ম নেওয়া এই মেধাবী মানুষের হাত ধরেই বাংলার চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা পায় নতুন পরিচয়। তিনি সম্পাদনা করেন বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথপ্রদর্শক পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক সিনেমা’। প্রযুক্তি, লেআউট ও উপস্থাপনায় পত্রিকাটি হয়ে ওঠে অনন্য এবং গবেষকদের কাছে আজও আগ্রহের বিষয়।
বৃহত্তর বাংলায় প্রথম শিশু চলচ্চিত্র নির্মাণের গৌরবও তাঁর। তাঁর নির্মিত ‘প্রেসিডেন্ট (চৎবংরফবহঃ)’ চলচ্চিত্রে দেশপ্রেম ও শিশুদের সচেতনতা তুলে ধরা হয়। সময়ের তুলনায় এটি ছিল অত্যন্ত প্রগতিশীল এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের অধিকারী একটি সৃজনশীল উদ্যোগ। চলচ্চিত্রে তাঁর অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চালু করা হয়েছে ‘ফজলুল হক স্মৃতি পদক’, যা প্রতিবছর চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা ও চিত্রশিল্পে অবদান রাখা ব্যক্তিদের প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)-এর একটি প্রধান অডিটোরিয়ামও তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে, যা তাঁর প্রতি রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধার প্রতীক।
ফজলুল হকের সহধর্মিণী ছিলেন দেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন—যিনি ৫০টিরও বেশি উপন্যাস এবং ৪০০-এর বেশি ছোটগল্পের স্রষ্টা। তাঁর নামেও বাংলা একাডেমি কথাসাহিত্যে স্মারক সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাঁদের সন্তানদের মধ্যে রয়েছেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর, যিনি বাবার নির্মিত চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’-এ শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। এছাড়া কেকা ফেরদৌসী, ফরহাদুর রেজা প্রবাল ও ফারহানা মাহমুদ কাকলী দেশের সংস্কৃতি ও মিডিয়া অঙ্গনে সমানভাবে যুক্ত আছেন।
লেখা, চলচ্চিত্র, শিশু মনোজগত ও শিল্প-সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদান রেখে আড়ালে চলে যাওয়া এই মহান ব্যক্তিত্ব আজও বাংলার চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা ও শিশু চলচ্চিত্রের পথিকৃত হিসেবে আলো ছড়িয়ে আছেন। তাঁর বিদেহী আত্মার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
বিআলো/তুরাগ



