সারাদেশের নৌপথ পুনরুদ্ধারের দাবিতে: তিতাস থেকে বুড়িগঙ্গা’ নদীযাত্রা শুরু
এফ এইচ সবুজ: সারাদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌপথ পুনরুদ্ধার, দখল-দূষণমুক্ত নদী এবং নদীমাতৃক বাংলাদেশের ঐতিহ্য পুনর্জাগরণের দাবিতে বিশেষ কর্মসূচি নিয়ে নদীপথে যাত্রা শুরু করছে নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক আন্দোলন ‘তরী বাংলাদেশ’। ‘তিতাস থেকে বুড়িগঙ্গা’ শীর্ষক এ প্রতীকী নদীযাত্রা শুরু হবে আজ শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদী থেকে এবং আগামীকাল শনিবার (২৫ অক্টোবর) বুড়িগঙ্গা থেকে ফেরার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হবে।
শুক্রবার ভোর ৬টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর আনন্দবাজার ঘাট থেকে বুড়িগঙ্গার সদর ঘাটের উদ্দেশ্যে নৌযানে যাত্রা শুরু করবে তরী বাংলাদেশ। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে যাত্রাবহর পৌঁছাবে ঢাকার ঐতিহাসিক বুড়িগঙ্গা নদীতে।
এ উপলক্ষে বিকেল ৪টায় সদরঘাটে বিআইডব্লিউটিএ’র নতুন টার্মিনাল ভবনের দ্বিতীয় তলায় অনুষ্ঠিত হবে নদী-সুরক্ষা বিষয়ক মতবিনিময় সভা। এতে অংশ নেবেন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী, গবেষক, নৌপরিবহন বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের সদস্যরা। পরদিন শনিবার সকাল ৬টায় বুড়িগঙ্গা থেকে পুনরায় তিতাস অভিমুখে যাত্রা করবে প্রতিনিধিদল।
নদীর প্রাণ ফিরে পেতে চাই রাষ্ট্র-সমাজের সমন্বিত পদক্ষেপ : বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা গড়ে উঠেছে বুড়িগঙ্গার তীরে। অথচ একসময় নৌপরিবহনের প্রধান ধমনী থাকা এই নদী আজ দেশের সবচেয়ে দূষিত নদীগুলোর একটি। পরিবেশ ও নদী গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ শিল্পবর্জ্য, পয়ঃবর্জ্য ও কঠিন বর্জ্য সরাসরি বুড়িগঙ্গায় ফেলায় পানির অবস্থা ভয়াবহ। পানির রং কালো ও দুর্গন্ধযুক্ত; ক্রোমিয়ামসহ ভারী ধাতু ও ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা বহু গুণ বেশি, দুই তীরজুড়ে অবৈধ দখল, স্থাপনা নির্মাণ, বালু ভরাট ও নাব্যতা হ্রাসে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ প্রায় বাধাগ্রস্ত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালুসহ আশপাশের নদীগুলোর পানি পরিবেশগতভাবে “জীবনধারণের অযোগ্য” হিসেবে চিহ্নিত। নদী বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যে বুড়িগঙ্গা মরছে, আর বুড়িগঙ্গা মরলে ঢাকা টিকবে না।
২৪ হাজার কিলোমিটার থেকে কমে ৬ হাজার কিলোমিটারে নৌপথ : সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একসময় দেশের ২৪,০০০ কিলোমিটারের বেশি নদীপথ নৌ-চলাচলের উপযোগী ছিল। দখল-দূষণ-ভরাট এবং প্রবাহ সংকটের কারণে বর্তমানে তা কমে ৬,০০০ কিলোমিটারের নিচে নেমে এসেছে। এর ফলে নৌপরিবহন ব্যাহত, নদী-নির্ভর অর্থনীতির ক্ষতি, জলবায়ু ও বন্যা-ঝুঁকি বৃদ্ধি, মাছ, জেলে ও নদীকেন্দ্রিক জীবিকা হুমকিতে।
তরী বাংলাদেশ সংগঠনের নেতারা বলেন, নদী ও নৌপথ বাঁচাতে রাষ্ট্র, প্রশাসন ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি। দখলদার উচ্ছেদ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ, জীববৈচিত্র্য নিশ্চিত করা এবং নাব্যতা ফিরে পেতে জরুরি জাতীয় ঘোষণা প্রয়োজন। নৌপথ সচল হলে আমাদের অন্যান্য পথের ওপর চাপ কমবে, জনগণ স্বস্তি পাবে। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা পাবে, অর্থনীতি লাভবান হবে, সর্বোপরি বাংলাদেশও এগিয়ে যাবে সুষম ভাবে। তারা আরো বলেন, নৌপথ বাঁচুক, নদী বাঁচুক- নদীমাতৃক বাংলাদেশ টিকে থাকুক।’’
বিআলো/এফএইচএস



