খানপুরে নিরাপত্তা প্রহরীকে ইট দিয়ে হত্যা, পটুয়াখালী থেকে গ্রেফতার প্রধান আসামি অপু
মনিরুল ইসলাম মনির : নারায়ণগঞ্জের খানপুর মহল্লার একজন নিরাপত্তা প্রহরী। প্রতিদিনের মতো দায়িত্বেই ছিলেন। কিন্তু কয়েকজনের রোষানলে পড়ে জীবনটা শেষ হয়ে গেল নির্মমভাবে—ইটের আঘাতে। সেদিন ঘটে যাওয়া সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান আসামি অপু (২৫) কে অবশেষে পটুয়াখালী থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যাব।
এর একদিন আগে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় র্যাব-১১ এর সদর কোম্পানি ও র্যাব-৮ এর যৌথ টিম কলাপাড়া থানার বলিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। গ্রেফতারকৃত অপুর বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার মহসিন ক্লাবের গলিতে। তার বাবার নাম হিরা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যায়, খানপুর জোড়া পানি ট্যাংকির ভেতরে ৬ জন যুবক মিলে প্রহরী আবু হানিফের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ইট দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করছেন। পাশে একটি শিশুও দাঁড়িয়ে ছিল। প্রাণভিক্ষা চাইলেও হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাননি হানিফ। একপর্যায়ে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
জানা গেছে, নিহত আবু হানিফ বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার আবুল কালামের ছেলে। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে তিনি খানপুরের জিতু ভিলায় নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করতেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০ অক্টোবর বেলা ১২টার দিকে একটি শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত অপুসহ ১০-১২ জন লোক খানপুর জিতু ভিলার নিরাপত্তা প্রহরী আবু হানিফ (৩০)-কে তার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। প্রথমে তাকে নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিপরীত পাশে সুন্দরবন মাঠে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়। এরপর আনুমানিক সাড়ে ১২টায় সেখান থেকে তাকে সেন্ট্রাল হাসপাতালের সামনে জোড়া ট্যাংকির মাঠের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে আরো উচ্ছৃংখল জনতা হানিফকে মারধর করে।
সর্বশেষ, দুপুর দেড়টায় থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অটোতে করে খানপুর মেট্রো হলের পশ্চিম পাশে বাউন্ডারী করা খালি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই উল্লিখিত বিবাদীসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫-৬ জন তাকে ইট দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর, কিল, ঘুষি ও লাথি মারে। এতে আবু হানিফের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়। আহত হানিফকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বেলা ৩টায় খানপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিনই রাত ১০টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনায় নিহতের ভাই মো. হযরত আলী বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি নিয়মিত হত্যা মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামি অপুকে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
প্রসঙ্গত, একজন সাধারণ নিরাপত্তা কর্মী—যাকে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়—তারই জীবন কেড়ে নেওয়া হলো এমন নিষ্ঠুর পদ্ধতিতে। এ ঘটনায় এলাকায় শোক, ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিআলো/তুরাগ



