ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান, চরম ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
নুরুল আমিন, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের হরিণা এলাকায় অবস্থিত হাজী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে। শ্রেণিকক্ষের টিনের ছাউনি ও বাঁশের বেড়ায় বড় বড় ছিদ্র থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে প্রতিদিনই।
২০০৮ সালে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ-সচিব ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগী চৌধুরী মোহাম্মদ জিয়াবুল হক তাঁর পিতা হাজী মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৩০০-রও বেশি শিক্ষার্থী, ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৫ জন কর্মচারী রয়েছেন। তবে বিদ্যালয়ের টিন ও বাঁশের তৈরি ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ ও অতি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে পাঁচটি টিনশেড কক্ষ রয়েছে, যেগুলোর অধিকাংশের ছাউনিতে ছিদ্র এবং দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। মেয়েদের জন্য আলাদা কমনরুম নেই। সম্প্রতি জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর আর্থিক সহায়তায় একটি সেমিপাকা টিনের ঘর নির্মাণ করা হলেও সেটিও অপর্যাপ্ত ও অপরিচ্ছন্ন। ফলে শ্রেণিকক্ষ সংকটে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা গ্রুপভিত্তিক ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে।
৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজমিন আকতার ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তাদিব বলেন, “গরমের মধ্যে বাঁশের বেড়ায় তৈরি ঘরে ক্লাস করতে খুব কষ্ট হয়। দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ হলে আমরা স্বস্তিতে পড়াশোনা করতে পারব।”
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী জয়ন্তী বড়ুয়া জানান, “ধর্মীয় ও গ্রুপ ক্লাসগুলো এই টিনের ঘরেই হয়। গরমে টিকেই থাকা কঠিন।”
বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক এসফাকুর রহমান বলেন, “লোহাগাড়ার অনেক বিদ্যালয়ে উন্নয়ন হলেও আমাদের বিদ্যালয়টি এখনো অবহেলিত। বৃষ্টির সময় কক্ষে পানি ঢুকে যায়, গরমে শিক্ষার্থীরা হাঁসফাঁস করে। শিক্ষার মান ধরে রাখলেও অবকাঠামোগতভাবে আমরা অনেক পিছিয়ে।”
এলাকার বাসিন্দা ও এনসিপির উপজেলা প্রধান সমন্বয়কারী মো. জহির উদ্দিন বলেন, “এ বিদ্যালয়টি সবচেয়ে অবহেলিত। অতীতে কোনো উন্নয়ন হয়নি। স্থানীয়ভাবে যতটুকু পারা যায়, সহায়তা করা হয়েছে। নতুন ভবন হলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হবে।”
বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য খোরশেদ আলম ভুট্টু জানান, “বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের জন্য আমি বারবার ঢাকায় গিয়েছি, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন- বরাদ্দ পেলেই নির্মাণকাজ শুরু হবে।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কান্তি ধর বলেন, “বর্তমান ভবনটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। বৃষ্টি ও রোদ উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি টিম মাটি পরীক্ষা করে গেছে। আশা করছি শিগগিরই নির্মাণকাজ শুরু হবে।”
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, “বিদ্যালয়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস করছে। শিক্ষার মান ভালো হলেও ভবনের জীর্ণ অবস্থা বড় সমস্যা।”
চট্টগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল এহেছান জানান, “বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই টেন্ডার আহ্বান করে কাজ শুরু করা হবে।”
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে, যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।”
বিআলো/শিলি



