• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    খালেকের নীল বেদনার গল্প 

     dailybangla 
    04th Aug 2021 1:23 am  |  অনলাইন সংস্করণ

    পড়ন্ত বিকেল। ঘড়িতে চোখ যেতেই ঘণ্টার কাঁটা ৪টা পেরোল কেবল। লকডাউনেও ব্যস্ত রাজধানীর হাতিরঝিলের একমুখী রাস্তা। মহানগর ব্রিজের পাশ দিয়ে শাঁ শাঁ করে ছুটছে গাড়ি। ইট-পাথরের এই নগরের এক টুকরা সবুজ ছায়ায় মানুষ ছুটছে যার যার গন্তব্যে। আশপাশে অনেকের উপস্থিতি থাকলেও যেন কোথাও কেউ নেই! শুধু তাকিয়ে আছে দুটি চোখ। জোড়া চোখে এই পৃথিবীর রং দেখছেন দীর্ঘ ৯০ বছর। তিনি আব্দুল খালেক। বছরখানেক আগেও কাজ করতেন কারওয়ান বাজারের আড়তে। শারীরিক শক্তিক্ষয়ে এখন আর মাথায় তুলতে পারেন না ভারী কিছু। তাই গতর খাটা সেই কাজকে জানিয়েছেন বিদায়। তবে করোনার এই দুর্যোগে ভিক্ষার থালা হাতে তাঁকে নামতে হয়েছে ঘর ছেড়ে পথে। আব্দুল খালেকের খানিকটা দূরে বসেছিলেন স্ত্রী শান বানু (৬৫)। তাঁর দুচোখও স্যাঁতসেঁতে। কারণ এখন নীল কষ্টের ভেলায় চলছে তাঁদের জীবন। গতকাল মঙ্গলবার এই বৃদ্ধ দম্পতির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে উঠে আসে করোনাকালীন তাঁদের জীবনসংগ্রামের গল্পটা।

    ময়মনসিংহের ফুলপুর আব্দুল খালেকের গ্রাম। ১০ বছর আগে অজানা স্বপ্নে রাজধানীতে থিতু হন এই দম্পতি। বর্তমানে ছোট ছেলেকে নিয়ে থাকেন রাজধানীর সাততলা বস্তি এলাকায়। বড় ছেলে মা-বাবার খবর নেয় না পাঁচ বছর হয়েই গেল। উপার্জনক্ষম ছেলেটি কোথায় আছে সেটাও জানেন না তাঁরা। কারওয়ান বাজার আড়তে কাজ করার সময় খালেকের পরিবারের দিন ভালোই কাটছিল। স্ত্রী শান বানু তখন বাসাবাড়িতে কাজ করে উপার্জন করতেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বাইরে কাজ করায় বাসায় মেয়েদের রাখায় বিপদের শঙ্কায় ছোট দুই মেয়েকে রেখেছেন গ্রামের বাড়ি। তখন গ্রামে থাকা দুই মেয়ের জন্য নিয়মিত টাকাও পাঠাতেন। অল্প আয়ে একবুক কষ্ট নিয়ে চললেও খাওয়াদাওয়ায় কষ্ট পেতে হয়নি। বয়সের ভার আর করোনার সময়ে দেড় বছর ধরে কোনো কাজ করতে পারছেন না খালেক। স্বামী কাজ হারানোর পর স্ত্রীর বাসাবাড়িতে কাজ করে পাওয়া টাকা দিয়েই সংসার চলছিল। কিন্তু ঈদের সময় গ্রামের বাড়ি গিয়ে কাজ হারান শান বানু। ঈদের পর দুই দিন না খেয়ে দিন কাটান তাঁরা। আর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে রাস্তায় নামেন শান বানু। নিজে সাহায্য কম পাওয়ায় বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে ভিক্ষা শুরু করেন। হাতিরঝিলের মহানগর ব্রিজের নিচে রাস্তার পাশে স্বামীকে বসিয়ে দিয়ে নিজে দূরে বসে বসে শুধু কাঁদেন।

    বড় ছেলে খালেদ (৩০) রাজধানীতে থাকেন এটুকুই জানে তাঁর পরিবার। কখনো মা-বাবাকে টাকা-পয়সা না দিলেও ২০১৬ সালের দিকে অন্তত খবর নিতেন। কিন্তু বিয়ে করার পর সেটাও বন্ধ করে দিয়েছেন। শান বানু বলেন, ‘পোলাডা বড় হইয়া আর খবর নিল না। কার কাছে যামু। মাইয়া দুইডা ছোট। বাসাবাড়ির কামে থাহি বইলা ঢাহায় আনি না। করোনার মইধ্যে ঈদে বাড়িত গিয়া দুইডা কামই হারাইলাম। তাগো বাপে বুড়া হইয়া গেছে কাজ করতে পারে না। এই জন্যে রাস্তায় নামছি। আমারে কেউ সাহায্য দেয় না! এই জন্যে স্বামীরে দিয়া ভিক্ষা করাই। এই দিয়া তিনজনের জীবন কোনোমতে চলতাছে।’

    আব্দুল খালেক বলেন, ‘বুঝতে পারি নাই জীবনে ভিক্ষা করতে হইব। মাইনসের শক্তি তো সারা জীবন থাকে না। যখন আছিল কাম কইরা খাইছি। পোলাপানগোরে খাওয়াইছি। এখন কাউরে পাশে পাই না। মাইনসে কি ভিক্ষা দিব।’

    এই অসহায় পরিবারের দুর্দশার খবর জানার পর গতকাল বিকেলে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশনায় কালের কণ্ঠ শুভসংঘের বন্ধুরা এই পরিবারটির হাতে খাদ্য (বাজার) ও আর্থিক সহায়তা তুলে দেন। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন খালেক ও শান বানু। কাঁদতে কাঁদতে দুজন বলতে থাকেন, বাবারে মাইনসের কাছে চাইয়াও পাই না। আপনারা খুঁইজা আইসা দিয়া গেলেন। আল্লাহ আপনাগো ভালা করুক। আপনাগো মালিকরে আল্লায় আরো বেশি টাহা-পয়সা দিক।

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2025
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    25262728293031