ঐতিহাসিক রায়: মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার এক বছরের মাথায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ এবং চানখাঁরপুল-আশুলিয়ার হত্যাকাণ্ডে তাঁর নির্দেশনার প্রমাণ পাওয়ার ভিত্তিতে এ রায় দেওয়া হয়। একই মামলায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড এবং সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলার রায় ঘোষণা করেছে পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার আড়াই ঘণ্টা ধরে রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পাঠের পর বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করেন। তিনি বর্তমানে পলাতক এবং গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন।
ট্রাইব্যুনাল জানায়, উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ, এবং চানখাঁরপুল ও আশুলিয়ায় হত্যার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের সবগুলোই প্রমাণিত হয়েছে। উসকানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও বাকি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে।
তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও চানখাঁরপুল ও আশুলিয়ার হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগে একই সাজা পেয়েছেন। অন্যদিকে অপরাধ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
রায় ঘোষণার সময় আদালতপ্রাঙ্গণের চিত্র:
রায়ের সময় সুপ্রিম কোর্ট এলাকাজুড়ে ছিল সেনা, র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির কড়া নিরাপত্তা। এজলাসে নিহত ও আহতদের স্বজনসহ উপস্থিত অনেকে রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই হাততালি দেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান পরিস্থিতি শান্ত রাখতে উপস্থিত সবাইকে সাবধান করেন।
প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:
বিএনপি ও জুলাই অভ্যুত্থানকারীদের গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি রায়কে ‘ন্যায়বিচার’ বলে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগে থেকেই দাবি করা হচ্ছিল, মামলাটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।
টিএসসি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রায়ের পর উল্লাস হলেও অন্তর্বর্তী সরকার উসকানিমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকার কঠোর নির্দেশ দেয়।
রায় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের দিকে একটি এক্সকাভেটর নিয়ে এগোতে থাকে একদল লোক। গত ১০ মাস আগে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ওই ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে সেখানে অবস্থান নেওয়া পুলিশ ও সেনাসদস্যরা তাদের থামিয়ে দেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিচার্জ করে দলটিকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ভারতের প্রতি হস্তান্তরের আহ্বান:
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে ঢাকায় ফিরিয়ে দিতে ভারত সরকারের প্রতি আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাদের ফেরত পাঠানো ‘ভারতের দায়িত্ব’ বলেও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
মামলার অগ্রগতি:
মোট ৩৯৭ দিন সময় নিয়ে মামলাটির তদন্ত ও বিচারকাজ সম্পন্ন হয়। ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, ফোনালাপের অডিও এবং জাতিসংঘ প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
এ মামলায় আরও তিনটি অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ চলমান। আদালত অবমাননার দায়ে আগেই তাঁকে ছয় মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
বিআলো/শিলি



